নদীর ওপর বিশাল জলরাশি, খেলা করছে ঢেউ আবার চলাচল করছে বিশাল বিশাল জাহাজ। এসবের নিচে সুড়ঙ্গ দিয়ে মানুষজন যাতায়াত করবে, চলবে যানবাহনও। কিন্তু নদীর ওপর থেকে তা বোঝার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও তেমনি এক অসাধ্য সাধন হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে।
সরেজমিন দেখা যায়, সমুদ্রের পাশ দিয়ে গেছে আউটার রিংরোড। ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় এসে সড়কটি যুক্ত হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের অ্যাপ্রোচ রোডের সঙ্গে। এখান থেকে স্বপ্নের টানেল আপনাকে স্বাগত জানাবে।
প্রথমে হলুদ রঙের একটি ছাউনির নিচে প্রবেশ করবেন। এরপর ধীরে ধীরে আপনি টানেলের দিকে এগোতে থাকবেন। একপর্যায়ে নীল আকাশ আর দেখা যাবে না। নদীর আগে অনেক নিচে নামতে নামতে ঢুকে পড়বেন সুড়ঙ্গে।
হাইপ্রেশারের সোডিয়াম লাইটে আলোকিত পুরো সুড়ঙ্গ। দুই লেনের একমুখী সড়কের দুপাশে নানা নির্দেশনা লেখা রয়েছে। সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে তলদেশ দিয়ে পৌঁছানো যাবে নদীর আনোয়ারা অংশে। উপজেলার চৌমুহনী মোড়ে গিয়ে টানেলের অ্যাপ্রোচ রোড শেষ হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে এ সড়ক দিয়ে আবার টানেলে যাত্রা শুরু হবে। সড়কটি ধরে আরেকটি টিউব দিয়ে পৌঁছা যাবে পতেঙ্গায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জয় বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম বাংলাদেশিরা টানেল দিয়ে যাতায়াত করবেন। ইতোমধ্যে টানেলের ভেতরের যাত্রা কেমন হবে তা নিয়ে কৌতূহলের যেন শেষ নেই। সাধারণ মানুষ মুখিয়ে আছেন স্বপ্নের টানেল দিয়ে যাত্রার জন্য। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে নিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব তিনি পালন করে চলেছেন। এজন্য ২৮ অক্টোবরের জনসভায় উপস্থিত হয়ে নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাব।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব বলেন, ‘নদীর তলদেশ দিয়ে যাব— এটি আমাদের জন্য স্বপ্নের ছিল। সেটি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে এ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। এটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এখন আমরা মানুষজনকে বলতে পারব যে, প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তিনি তা করেন।’
জানা গেছে, টানেল নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
জেএন/এমআর