কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করতে শনিবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম আসবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষ্যে নৌকার আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ। বিশাল মাঠও জনসভার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আশপাশে সাজসজ্জার কাজও প্রায় শেষ। প্রধানমন্ত্রী যে সড়ক দিয়ে আসবেন সেটিতে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। নেত্রীকে একনজর দেখতে মুখিয়ে আছেন সবাই। জেলার বাইরে থেকে অনেকে আগেভাগে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। শনিবার সকাল সকাল কর্ণফুলী উপজেলার কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ১০ লাখ জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা দিতে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। জনসাধারণকে বোঝানো হচ্ছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতার শেষে একেবারে নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উপহার দিয়েছেন তিনি।
আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারেক চৌধুরী বলেন, টানেল আমাদের যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন আনবে। এটির প্রথম উপকারভোগী হবেন আনোয়ারার লোকজন। শনিবার জনসভায় এলাকার সবাই উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবেন।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে এক গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মহেশখালী, টেকনাফ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এক অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলছেন। বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজার রেললাইন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর আধুনিকায়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন, সাবরাং বিশেষায়িত ট্যুরিজম জোন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প এটিকে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নীত করছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক বলয়ের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করবেন। বীর চট্টলার জনতা প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উদ্বেলিত, উৎফুল্ল।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, টানেলের মতো মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবারের জনসভায় আমরা তাকে কৃতজ্ঞতা জানাব।
টানেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে শনিবার চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির মধ্যে রয়েছে– সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি গণভবন থেকে তেঁজগাও বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখান থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টার চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে পৌঁছাবে। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন। এরপর টানেল দিয়ে আনোয়ারা পৌঁছে ১২টায় সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। দুপুর ২টায় জনসভা শেষ করে আবার টানেল হয়ে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি এসে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
জেএন/এমআর