বিশ্বকাপে টানা দশ ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আহমেদাবাদে খেলতে নামে ভারত। দীর্ঘ এক যুগের আক্ষেপ ঘুচাতে প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
তবে টিম ইন্ডিয়ার সব আত্নবিশ্বাস যেন মাটিতে নামাল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অজিদের বোলিং তোপে এ যেন এক এলোমেলো ভারত। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স এবং জশ হ্যাজেলউডের তোপের সামনে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়েছে ভারতীয়রা।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে আহমেদাবাদে প্রায় দেড় লাখ দর্শককে চুপ করিয়ে ভারতকে মাত্র ২৪০ রানে আটেক দিল অজিরা। রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা বা হেক্সা জয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য ২৪১ রান।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আজ ভারতের হয়ে সূচনাটা ভালোই করেছিলেন ওপেনার এবং অধিনায়ক রোহিত।
স্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে তিনি চড়াও হতে শুরু করেছিলেন অজি বোলারদের উপর। ফলে দ্রুত রান উঠতে শুরু করেছিল ভারতের স্কোরবোর্ডে। তবে রান তলার এ ধারায় বাঁধা পড়ে গিল আউট হলে।
চতুর্থ ওভারে স্টার্কের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার মুঠোবন্দী হন গিল। ফলে ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এরপর ক্রিজে রোহিতের সঙ্গী হন বিরাট কোহলি।
এ দুজন মিলে দ্রুতই সফল একটি জুটির দিকে এগোচ্ছিলেন। রোহিতের মারকুটে ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৩২ বলেই স্কোরবোর্ডে ওঠে ৪৬ রান। তবে এরপরই আবারো আঘাত হানে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচের ১০তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ট্রাভিস হেডের ক্যাচে পরিণত হন রোহিত। ব্যক্তিগত অর্ধশতক থেকে ৩ রান দূরে থাকতেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৪ চার আর ৩ ছয়ে করেছেন ৪৭ রান। অধিনায়ক ফেরার ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আইয়্যার।
সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকানো আইয়্যারও আজ দলের হাল ধরতে পারেননি। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনিও ফিরে যান কট বিহাইন্ড হয়ে। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশের গ্লাভসবন্দী হয়ে ৪ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় তাকে।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে নামা লোকেশ রাহুলকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামল দিয়ে এগোতে থাকেন কোহলি। ইনিংসের ২৬তম ওভারে নিজের অর্ধশতক পূরণ করে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিরাট। তবে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে ব্যক্তিগত ৫৪ রান করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন কোহলি।
মিডল অর্ডার ব্যর্থতার দিনে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দেওয়া হয় রবীন্দ্র জাদেজাকে। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি জাদেজা। দেখে-শুনে খেলেও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি।
৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে হ্যাজলউডের খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ৯ রান।
এদিকে উইকেটে লম্বা সময় কাটালেও মন্থর ব্যাটিংয়ে ইনিংস বেশি লম্বা করতে পারেনি লোকেশ রাহুল। মিচেল স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে তিনি ফিরলেন ১০৭ বলে ৬৬ রান করে। যা অজিদের বিপক্ষে ভারতীয় ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটার তিনি। রাহুলের বিদায়ে পর আড়াইশর আগেই থেমে যাওয়ার শঙ্কায় ভারতের দলীয় ইনিংস। হলও তাই।
রাহুলের ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজঘরে ফিরেন মোহাম্মদ শামি ও জাস্প্রিত বুমরাহ। দলীয় ২১৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে দ্রুত অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা।
সূর্যকুমার যাদব ও কুলদীপ যাদব মিলে শেষ দিকে আশা জাগানোর মতো কিছুই করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন পেসার মিচেল স্টার্ক।
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে তাদের লক্ষ্য ২৪১ রান। অপরদিকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিততে হলে টিম ইন্ডিয়াকে অজিদের আটকাতে হবে ২৪০ রানের ভেতর।
জেএন/আর এস