মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের সাথে দেখা করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন লুসি হল্ট।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বরিশাল পৌঁছে সার্কিট হাউজে পৌঁছার আগেই কবি জীবনানন্দ সড়কের অক্সফোর্ড মিশনে ছুটে যান শেখ রেহানা। এসময়ে শুভেচ্ছাসহকারে ফুল ও ফল নেওয়া হয় রেহানার পক্ষ থেকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার জন। তিনি বলেন, দুপুর সোয়া একটার দিকে ফুল-ফল নিয়ে আসেন জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। লুসি হল্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই আসেন তিনি।
তিনি হলরুমে ঢুকেই লুসি হল্টের কাছে গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পাশে বসে লুসি হল্টের হাত ধরে তার শারীরিক খোঁজ খবর নেন।
শেখ রেহানা লুসি হল্টের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘নাচ ময়ূরী নাচরে’ গানটি শোনেন। বিদায়ের আগে মিশনের হলরুম ঘুরে দেখেন ও প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শোনেন।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস, সিস্টার মার্গারেট, সিস্টার শেফালী, সিস্টার শিখা, চার্চের ম্যানেজার রিচার্ড রতন হালদার, সাংবাদিক অপূর্ব অপু, অপসোনিন ফার্মার প্রকল্প সমন্বয়ক রফিকুর রহমান।
সূত্র মতে, ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্মগ্রহণ করেন লুসি হল্ট। তার বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন লুসি। ১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড মিশনের একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশে আসেন তিনি। নিয়োজিত হন মানবতার সেবায়।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সহযাত্রীরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তিনি থেকে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আত্মগোপনে থেকে যশোর হাসপাতালে আহতদের সেবা করেন।
দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বপক্ষে চিঠি লেখেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধাহতদের সেবা করেন। দেশ স্বাধীনের পরও তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। মায়ার বন্ধনে থেকে যান।
যুদ্ধ পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও দেন লুসিকে। পরে দেশের বিভিন্নস্থানে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন লুসি। ৯৩ বছর বয়সের লুসি শেষ জীবনে স্থায়ী হয়েছেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে।
তার জীবনের একমাত্র চাওয়া ছিল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া এবং মৃত্যুর পর বরিশালের মাটিতে যেন তাকে সমাহিত করা হয়। দীর্ঘসময় ধরে সরকারের বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাননি।
এছাড়া অর্থ সংকটে নিজের চিকিৎসা চালানো এবং ব্রিটিশ নাগরিক লুসির বাংলাদেশের ভিসা ফি নবায়নে বছরে ৪০-৪৫ হাজার টাকা যোগাড় করাও ছিল কষ্টসাধ্য।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তৎপর হয়ে ওঠে বরিশালের স্থানীয় প্রশাসন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিসা ফি মওকুফ যুক্ত পাসপোর্ট তুলে দেন লুসির হাতে। পরে প্রধানমন্ত্রী লুসির স্বপ্ন পূরণে গণভবনে লুসিকে ডেকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন।
সেই লুসির শারীরিক খোঁজ নিতে আজ শুক্রবার সশরীরে স্বয়ং লুসির ঘরে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। তার এ আগমনকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব ছিলো পুরো অক্সফোর্ড মিশনে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা তার সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটান।
জেএন/পিআর