চট্টগ্রাম-৯ আসনে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ নওফেল!

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসন থেকে আবারো ভোটযুদ্ধে মেতেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

- Advertisement -

নগরের কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার আর ডবলমুরিং থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসনে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কেউ নেই। মাঠে নেই বিএনপির মতো বড় দলের প্রার্থীও।

- Advertisement -google news follower

এদিকে প্রার্থীর সংখ্যাটা খানিক বড় হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় পুরো সংসদীয় এলাকা জুড়ে রাজ করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নওফেলের নৌকা প্রতীক। পুরো সংসদীয় আসনটিতে একাই তৈরি করে নিয়েছে নির্বাচনী আমেজ।

কিছু কিছু এলাকায় বাকি প্রার্থীদের নাম মাত্র কিছু পোস্টার ব্যানার ঝুলতে দেখা গেলেও প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়। আবার কেউ কেউ প্রচার-প্রচারণার জন্য বের হলেও মাঠে সেভাবে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে পারেননি। ভোটারদের মন জয় করার জন্য উল্লেখযোগ্য আশ্বাসের বাণীও শোনাতে পারেনি কোন প্রার্থী।

- Advertisement -islamibank

অন্যদিকে ভোটের মাঠে প্রচারে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন নৌকার প্রার্থী নওফেল। দৃশ্যত বিজয় নিশ্চিত, তবু জোর প্রচারণায় নওফেল একাই মাতিয়ে চলেছেন, তৈরি করেছেন ভোটের আমেজ। নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর থেকে প্রতিদিন সকালে কর্মিসভা আর দুপুরের পর মিছিল-গণসংযোগ।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংসদীয় আসনের অলিতে গলিতে ট্রাক,সিএনজি কিংবা প্রচারণার গাড়ির মাইকে বাজছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি গান। গণসংযোগ আর মিছিলে নেতাকর্মীরা স্লোগান ধরছে ‘নওফেল ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’

শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পুরোপুরি নির্ভার আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী। পুরো চট্টগ্রামের জনমানুষের প্রিয় নেতা প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র নওফেলের নির্বাচনীযাত্রা খুবই সহজ বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররাও। কেউ কেউ বলছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে নওফেল ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’!

সরেজমিনে নগরীর পাথরঘাটা, রাজাপুকুর লেইন, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, আন্দরকিল্লা, জামালখান, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণ বাকলিয়া, চকবাজার, মিয়াখাননগর, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তক মোড় ও উত্তর পাঠানটুলীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে। প্রতিটি অলিতে গলিতে নৌকা প্রতীকে নওফেলের পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এসব এলাকার সাধারণ অনেক ভোটারদের কাছ থেকে তাদের ব্যক্তিগত মতামত নিয়েছি।

অনেকেই বলেছেন, চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলো চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা। তিনি খুব সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন, সম্মান করতেন। ছেলেও বাবার মতোনই হয়েছে। গুনীজনদের সম্মান করতে সে ভুলে না। সেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাবার মতো গণমানুষের নেতা হয়ে উঠেছেন। আশা করি এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নওফেল বিপুল ভোটে পাশ করবেন।

তবে অন্য দলের প্রার্থীদের মোটেও খাটো করে দেখছেন না নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিদ্বন্দ্বীই ভাবছেন। অলিগলি ঘুরে শুনছেন ভোটারদের সুখ-দুঃখের কথা।

এ বিষয়ে নওফেল বলেন, আমার পুরো সংসদীয় আসনটিতে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা বেশ উৎফুল্ল, উৎসুক। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে মশারির ভেতর আপনার ঘুম হারাম করতে একটা মশাই যথেষ্ট।

সে চিন্তাধারা থেকে আমি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের কথা শুনছি। তাদের সুখ দুঃখের ভাগিদার হওয়ার চেষ্টা করছি। আর আমার নির্বাচনী এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের যে ভালবাসা পাচ্ছি তাতে আশা রাখছি আমার প্রচারণা সার্থক হবে।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পার্টির সানজিদ রশিদ চৌধুরী, ন্যাপের মিটুল দাশগুপ্ত, ইসলামিক ফ্রন্টের মো. ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ নূরুল হোসাইন ও তৃণমূল বিএনপির সুজিত সাহা প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে কল্যাণ পার্টি ও তৃণমূল বিএনপির প্রচারণা নেই বললেই চলে।

তবে সাধারণ কেউ কেউ এ আসনে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার সানজিদ রশিদ চৌধুরীকে। কারণ পারিবারিকভাবে তারও বেশ পরিচিতি রয়েছে।

নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এ আসন থেকে তিনিও বিজয়ী হবার আশা প্রকাশ করছেন। জানালেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও অনেক কর্মী-সমর্থক ভোটের মাঠে তার সঙ্গে আছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও দলাদলির ঊর্ধে উঠে তার জন্য কাজ করছেন।

জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের আবু আজম। কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মোজাফফর)র মিটুল দাশগুপ্তকে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

বন্দর নগরীর কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানা মিলিয়ে এই আসনটিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পড়েছে ১৪টি। মোট ভোটার ৪,০৯,৫৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,১১,৭৪৭ জন এবং নারী ১,৯৭,৮৩২ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮ জন।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নওফেল বিএনপির শাহাদাত হোসেনের মতো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে শিক্ষা উপমন্ত্রী করা হয়।

জেএন/রাজীব

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM