কক্সবাজারের মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিকখাতে গ্যাস সরবরাহ আকস্মিকভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সরবরাহ লাইনে গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।
কোথাও বৃহস্পতিবার রাত ২টায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আজ শুক্রবার ছুটির দিনে বন্দর নগরীসহ পুরো চট্টগ্রামের আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতের কোথায়ও গ্যাস না থাকায় জ্বলছে না রান্নার চুলা। ঘরে ঘরে হাহাকার চলছে। বন্ধ গ্যাস নির্ভর শিল্প কারখানা। বিদ্যুৎকেন্দ্র সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পৌর সদরের ২ নং ওয়ার্ডস্থ খাস্তগীর পাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক সুমন দাশ জানান, বিগত কয়েকমাস ধরে বাসায় গ্যাস সংকট অনুভব করছি। কখন আসে কখন যায় তার ঠিত থাকেন না। শুক্রবার ছুটির দিনে ভোরে নাস্তা বানাতে গিয়ে আমার স্ত্রী দেখে চুলা জ্বলছে না। এখনো ( দুপুর দেড়টা) গ্যাস আসেনি।
চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকার বাসিন্দা শিউলি বেগম জানান, চুলায় গ্যাস নেই, এটা আজ নতুন নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা চলছে। কখনও ভোর ৬টায়ও চুলায় গ্যাস পাই না। কখনও আসে সন্ধ্যায়। রাত ১২টায়ও আসে।
আজ এখনো গ্যাসের মেলেনি। খবর নিয়ে জানতে পারি পুরো চট্টগ্রামেই আজ গ্যাস সাপ্লাই নেই।
পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা রানা সেন জানান, গ্যাস না থাকায় রান্নার চুলা জ্বলছে না। ফলে বাইরে হোটেল থেকে ভাত-তরকারি কিনতে গিয়ে দেখি মানুষের দীর্ঘ লাইন। তখন জানতে পারেন, চট্টগ্রামসহ কেজিডিসিএল’র আওতাধীন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের মহেশখালিতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
মেরামত শেষে দীর্ঘ আড়াই মাস পর একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে এনে সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে সেটি বিকল হয়ে পড়ে। ফলে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আগে থেকে চালু টার্মিনাল সচল থাকলেও তাতে সরবরাহ করার মতো এলএনজি নেই। বিকল টার্মিনাল সচল করার কাজ চলছে।
কেজিডিসিএল’র বিপণণ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক (দক্ষিণ) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, এলএনজি টার্মিনালে টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততার সঙ্গে এ সংকটের সমাধান হবে।
কেজিডিসিএল’র প্রকৌশল ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল ছাড়া বিকল্প কোনো উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে পাওয়া প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিয়মিত গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে কেজিডিসিএল।
এর মধ্যে একটি টার্মিনাল জরুরি সংস্কার কাজের জন্য গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এজন্য গত তিনমাসেরও বেশিসময় ধরে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৭ জানুয়ারি সেটি ফেরত এসেছে। সেটি পুন:স্থাপন করতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সরবরাহে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
কেজিডিসিএল’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয় শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে। এ তিনটি খাতে গ্যাসের প্রয়োজন প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আরও ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাকি গৃহস্থালি ও শিল্পখাতে সরবরাহ করে কেজিডিসিএল।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে গৃহস্থালির পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প কারখানা, সিএনজি স্টেশন, হোটেল-রেস্টুরেন্টেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে।
জেএন/পিআর