‘শীতে খুব সকালে ভাড়া পাইনি, বেলা বাড়লে যাত্রী পাইছি। আজকে মনে হয় শহরে ঠান্ডা বেশি। এক্কেবারে মাঘের শীত! রিকশা চালাইলে শরীর গরম থাকে, কিন্তু কানে বাতাস লাগে। তয় আমাদের এলাকার মতো ঠান্ডা না’—কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার রিকশাচালক মো. মুকসিদুল ইসলাম।
মুকসিদুলের কথার মতোই মাঘের শীত জেঁকে বসেছে রাজধানীসহ সারা দেশে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলাসহ অন্তত ২২ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সোমবার রেকর্ড করা হয়েছে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। যদিও উত্তরের জেলা দিনাজপুর ও নওগাঁয় গতকাল রেকর্ড করা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়ে ঢাকার তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় উত্তরের জেলাগুলোয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যানবাহনগুলোকে দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। জেলা ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বেশির ভাগই শিশু। শৈত্যপ্রবাহের কারণে কয়েকটি জেলায় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২২ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ ২২টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
এই শৈত্যপ্রবাহ কিছু জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি হিসেবে বিস্তার লাভ করতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ও নওগাঁর বদলগাছিতে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত পাঁচ বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০২৩ সালে শ্রীমঙ্গলে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এর বাইরে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ ২০২০ ও ২০২২ সালে ৬ ডিগ্রি এবং ২০২১ সালে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, আগামী দুদিন হয়তো রাতের তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। তবে ২৪ জানুয়ারির পর আবার সারা দেশে তাপমাত্রা কমবে। বিক্ষিপ্তভাবে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে। ঢাকার তাপমাত্রা এ সময়ে ১ ডিগ্রির মতো কমতে পারে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে শীতের তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যাবে না। জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। এ সময়ে তাপমাত্রা এমনই থাকে।
ঢাকায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকায় গতকাল চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ আগের দিনও এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত পাঁচ বছরে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০২২ সালে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০২১ সালে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি, ২০২০ সালে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে নেমেছিল ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে, ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এসএ