চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ফৌজদারহাটের সাগর পাড়ে জেলা প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে আজ থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। ‘ফুলের মতো আপনি ফুটাও গান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজন করা হচ্ছে এ ফুল উৎসব।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মাসব্যাপী এ ফুল উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব মাহবুব হোসেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তীসহ আরো অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাগণ।
আজ থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই ফুল উৎসবের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে।
সামনের প্রজন্ম এর জন্য আমাদেরকেই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য জেলা প্রশাসকগণকেও এই ধরনের আয়োজন করার জন্য উদাত্ত আহ্ববান জানান।
বিশেষ অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অবৈধ দখল, মাদক অভয়ারণ্য কে ফুলের বাগিচা বানানো হয়েছে। পর্যটনকে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন।
পাশাপাশি এই উদ্যোগ যেন ক্ষনিকের উদ্যোগ না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেই আহবানে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। এছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের জন্য হাউজিং ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো তোফায়েল ইসলাম চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ও জঙ্গিবাদ কে সমূলে নির্মূল করতে এই ধরনের কালচারাল আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও ভূমিদস্যুদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারি জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না। জায়গা ক্রমান্বয়ে উদ্ধার করে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়াও প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকল এমপি ও সচিবগণকে ধন্যবাদ জানান যারা এসে উক্ত অনুষ্ঠান সাফল্যমন্ডিত ও বৃক্ষরোপণ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুল উৎসব ঘিরে সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় সাজ সাজ রব। ১৯৪ একর ভূমিতে সেজেছে অপরাজিত, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, চেরি, উইলোসহ দেশী-বিদেশী ১২৭ প্রজাতির ফুলে। পার্কের স্থান থেকে অনেক দুরেও ভেসে যাচ্ছে ফুলের সুগন্ধ। ঘুরতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন ভ্রমন পিপাসু শতশত নর-নারী ও দর্শনার্থী।
যেদিকেই তাকানো হয়, যেন অন্যরকম এক অনুভুতি। চোখ জুড়ানো এ ফুল উৎসবকে ঘিরে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি সেলফি জোন। যেকানে আগ্রহের সাথে নিজেকে ফ্রেমে বন্দী করছেন আগত দর্শনার্থীরা।
জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়, মাসব্যাপী এ ফুল উৎসব ঘিরে এখানে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস হতে আগত বাল্ব হতে জেলা প্রশাসনের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাচ হাজার টিউলিপ। এসকল ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রজাতির ফুলের পাশ্বেই লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে থাকবে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকার প্রদর্শনী।
তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে মাসব্যাপী আয়োজন। বিনোদন প্রেমীদের জন্য থাকবে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্ণার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিং এর ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল সহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যাবস্থা থাকবে।
শিশু- কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, সীসঅ, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইন সহ থাকবে নানা আয়োজন।
পুরো ফুল উৎসবকে ঝাকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হবে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির অংশগ্রহণে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন, ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কের ফৌজদারহাটে সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বালুচর শ্রেণির ১৯৪ একরের এ জায়গাটি এক সময়ে মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত লাভ করেছিল।
দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘শুকতারা’ নামে একটি পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট। ২০২২ সালের শেষ দিকে রেস্টুরেন্টটি উচ্ছেদ করে এই স্থানকে এখন ফুলের রাজ্য হিসেবে পরিণত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান।
মাদক সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিশাল এ জায়গাটি এখন বিনোদনপ্রিয়াসীদের বেড়াবার জায়গা। আজ থেকে এখানে মাসব্যাপী ফুল উৎসব শুরু হয়। পুরো উৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণ করতে সেখানে আয়োজন করা হবে ঘুড়ি উৎসব, ফায়ারওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুলনাচ ও জাদু প্রদর্শনী।
প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এবারের মেলা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ৩০ টাকায় টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করে ফুল উৎসব উপভোগ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য : গেল বছর ৯ ফেব্রুয়ারি হতে ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ দিন ব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসব এর আয়োজন করা হয়। সে সময় ১২২ প্রজাতির ফুলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছিলো ফুল উৎসব ২০২৩।
দশদিন ব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমন করেন ডিসি পার্ক। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এমন অনুপ্রেরণা থেকেই প্রতিবছর এ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জেএন/পিআর