যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে এক নারীকে হত্যাকারী কেনেথ ইউজেন স্মিথের মৃত্যুদণ্ড নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে কার্যকর হয়েছে। বিশ্বে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরে এমন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলো।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৮টা ২৫ মিনিটে কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। খবর বিবিসির।
এই মৃত্যুদণ্ডকে নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক শাস্তি আখ্যায়িত করে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে এবং নিম্ন আপিল আদালতে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা।
তাতে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে স্মিথের শরীরে ১৫ মিনিট যাবত নাইট্রোজেন গ্যাস পাম্প করা হবে।
তিনি ১৯৮৯ সালে তার স্ত্রী ও ধর্মপ্রচারক ইলিজাবেথ সেনেট’কে হত্যা করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয় ৫৮ বছর বয়সী স্মিথের বিরুদ্ধে। ফলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।
ডেথ পেনাল্ট্রি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্যমতে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বেও এ পদ্ধতিতে এটাই প্রথম মৃত্যুদণ্ড। স্মিথের আইনজীবীরা বুধবার রাতে জানান যে, তারা শেষবারের মতো আবারও আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টে সেই আপিল করা হয়। কিন্তু সেই আপিলও প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে স্মিথ লিখিতভাবে জানান, তার পরিণতি হলো নির্যাতন। তাকে দু’বছর আগে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে হত্যাকাণ্ড কার্যকরের চেষ্টা করে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কারণ, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় মধ্যরাত পেরিয়ে যায় তার ধমনী খুঁজে পেতে। ১৯৮৮ সালের ১৮ মার্চ এক হাজার ডলারে একজন খুনিকে ভাড়া করেছিলেন স্মিথ। তাকেসহ স্মিথকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আলাবামার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি অঙ্গরাজ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন আছে। এর কারণ হিসেবে রাজ্যগুলি কর্তারা বলছেন, প্রাণঘাতী ইনজেকশন পাওয়া অনেক সময় দুষ্কর হয়ে যায়, অনেক সময় সেটা অকার্যকরও হতে পারে, যেটা কেনেথের ক্ষেত্রে হয়েছে।
বিবিসি জানায়, কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রত্যক্ষ করতে গণমাধ্যমের পাঁচজন প্রতিনিধিকে রাজ্যের হলম্যান সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তদন্ত ও আদালতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে তার মুখে বিশেষভাবে তৈরি একটি মাস্ক পরানো হয়। এ মাস্কের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন চলাচলের সুযোগ ছিল না। মাস্কটির সঙ্গে নাইট্রোজেনভর্তি একটি সিলিন্ডারের সংযোগ ছিল।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই মাস্ক পরানোর পর সেখানে গ্যাস ঢুকতে থাকলে কেনেথকে হাসতে দেখা যায়। সেসময় তিনি পরিবারের স্বজনদের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের ভালোবাসি’।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই থেকে চার মিনিট কেনেথের শরীর মোচড়াতে থাকে। পাঁচ মিনিটের মতো তিনি ভারী শ্বাস নিতে থাকেন। এরপর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, অক্সিজেন ছাড়া নাইট্রোজেনে শ্বাস নিলে দেহকোষগুলো ছিঁড়ে যায়, যাতে মানুষের মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর আলাবামার গভর্নর কাই আইভি একটি বিবৃতি দেন। তিনি এতে উল্লেখ করেন, শাসন ব্যবস্থার ৩০ বছরের চেষ্টায় কেনেথ তার ভয়ঙ্কর অপরাধের জবাব পেয়েছেন। আমি প্রার্থনা করি, এতগুলো বছর বেদনা বয়ে বেড়ানো এলিজাবেথের পরিবার যেন এবার একটু স্বস্তিবোধ করতে পারেন।
জেএন/পিআর