চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানাধীন বাংলাবাজারে অবস্থিত এসআরভি রেলওয়ে স্টেশনটি এখন অস্থায়ী ট্রাক টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। স্টেশনটির আশে পাশে অবৈধভাবে রাখা আছে সারি সারি ট্রাক।
তাছাড়া এ এলাকার রেল লাইন ঘেঁষে রয়েছে একাধিক গ্যারেজ। যেখানে দিনরাত সমানে চলে রমরমা পোড়া তেলের বাণিজ্য। তাছাড়াও নিরাপত্তা বেস্টনীহীন এ স্টেশনের চারপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে স্ক্রাবসহ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় এলাকাবাসীর নানান অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি পরিচালিত একটি অভিযানে গিয়ে উঠে আসে এমন চিত্র। দেখে বুঝে ওঠার উপায় নেই এটি স্টেশন নাকি বাণিজ্যিক এলাকা।
রেলের সংরক্ষিত এলাকায় এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য চলে এই এসআরভি স্টেশনকে ঘিরে।
অভিযোগ রয়েছে, স্টেশন সংরক্ষণের একটি গেট থাকলেও সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। মূলত রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের সহযোগিতায় সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ স্থাপনা পরিচালিত হয়ে আসছে।
জানা গেছে, স্টেশনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাদারবাড়ী হয়ে রেললাইনটি হালিশহর সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে যুক্ত হয়েছে। এ লাইনেও চলাচল করে বন্দরের মালামাল ও মালবাহী বগি। অবৈধ স্থাপনার কারণে চলাচলে বিঘ্ন ঘটনায় অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে এ রেললাইন। সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার অবৈধ দখল উচ্ছেদের চেষ্টা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা থমকে যায়।
অভিযোগ রয়েছে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী সদস্য নরেশ এর সহযোগিতায় গড়ে উঠা এ ট্রাক স্ট্যান্ড/গ্যারেজ ও কবির, মহিউদ্দিন, কামাল, হোসেন, রাজীব, জিসান, মাহবুদ ও কালামের পোড়া তেলের ব্যবসা পরিচালনার জন্য মাসে অর্ধ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য চলে।
গতকাল ২৭ জানুয়ারি শনিবার গাড়ি ডাম্পিং করতে গিয়ে রেললাইনের উপর গড়ে ওঠা স্ক্রাব ব্যবসায়ীদের মালামাল থাকায় আটকে যায় ট্রেন। পরে তা সরিয়ে ডাম্পিং করা হয়।
রেল লাইনের উপরে থাকা অবৈধ মালামাল সরাতে গেলে অবৈধ দখলদারদের বাধার মুখে পড়ে রেল কর্মচারীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার জেটিআই পোর্ট এনামুল হক, হেড টিএক্সার আজাদ, রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুঙ্গ আব্দুস সালাম।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উচ্ছেদ অভিযানে আসি। যা চোখে পড়েছে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করব।
সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও ট্রাক চলাচলের রাস্তা বন্ধ ও স্টেশন এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করতে পারলে সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ হবে। তাছাড়া এসআরভি স্টেশনকে ঘিরে আমাদের ভিন্ন পরিকল্পনাও রয়েছে।
রেলের ভূ-সম্পত্তির বিভাগের কানুঙ্গ সালাম বলেন, স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে আমি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো।আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় উদ্দ্যেগ নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনাস্থলে পৌছালে স্থানীয় এলাকাবাসীরা তাদের মনের ক্ষোভ ঝারতে থাকে। তাদের মুখে উঠে আসে এসআরভি স্টেশন কেন্দ্রিক আরএনবি সদস্য নরেশ ও স্থানীয় নেতাদের মাসে লাখ টাকার চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্যারেজ মালিক আলমগীর বলেন, এই গ্যারেজগুলোতে ট্রাক কাভার্ডভ্যান পার্কিং এবং মেরামত করার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। কিছু দেওয়া হয় স্থানীয় নেতা বা পার্শ্ববর্তী বাড়ির মালিকদের। তাছাড়া আরএনবির হাবিলদার নরেশ বাবুকে দিতে হয় ১৫শ টাকা করে। কেউ দেয় ২ হাজার আবার কেউ ৩ হাজার। যার এরিয়ায় গাড়িবেশি সে টাকা দেয় বেশি।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে হাবিলদার নরেশ। তিনি জানান, এ বিশাল এলাকায় আমি পাহাড়াদার মাত্র। দুএকজন লোক নিয়ে এতবড় এলাকা তদারকি করা সম্ভব নয়। তবুও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলামের সাথে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।