ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর আরো বড় পরিচয় চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিএনপির সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা তিনি।
এবার হাটহাজারী আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন শাকিলা। তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। হাটহাজারীর রাজনীতি সচেতনদের মধ্যেই নয়; এ আলোচনা উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশজুড়েও। কারণ স্বয়ং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শাকিলাকে ঘিরে করেছেন মন্তব্য।
২৯ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওয়াহিদুল আলম কন্যা শাকিলা প্রসঙ্গে। তখন ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সে জঙ্গি ছিল বলেই বিএনপি তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এতে আবারো আলোচনায় আসেন শাকিলা ফারজানা। কারণ হামজা ব্রিগেড নামের একটি জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র কেনার জন্য এক কোটি ৮ লাখ টাকা যোগানের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আইনজীবী শাকিলা ফারজানাকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যারিস্টার শাকিলাকে জামিন দেন হাইকোর্ট।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনায় আসা শাকিলা ফারজানা শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। জয়নিউজের পাঠকদের কথা বিবেচনা করে তাঁর এ পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল।
‘রাজনীতির সূত্রটা একটু ভিন্ন বৈকি!!! রাজনীতির মাঠে নেতার হয় আলোচনায় থাকতে হবে, না হয় সমালোচনায় থাকতে হবে। আমার ক্ষেত্রেও তা ভিন্ন নয়। বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। আর এ নিয়ে শ্লাঘা অনুভব করাটা সবসময় গৌরবের বিষয় নয়। আমাদের সবসময় সবকিছু বাড়িয়ে বলার অভ্যাস। একটা ঘটনা বা সময় কে আমরা কে কিভাবে বিশ্লেষণ করবো, সেটা নির্ভর করে আমাদের মন-মানসিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা এবং মতলবের উপর। ইদানীং আমাকে নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া যখন যেভাবে সাকিলা ফারজানার ছবি দরকার সেখানে তা বসিয়ে দিয়ে সংবাদ প্রচার করে চলেছে। শুধু এ ছবিটি প্রকাশ করলে মানুষ ক্লিক করবে, তাদের ভিউআরস বাড়বে। কিন্তু তারা একবার ও ভাবেননা এতে কি তা মানহানিকর আচরণে পরছে কি পরছেনা?
প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রতি।দল আমাকে সঠিক সময়ে সঠিক মূল্যায়ন করেছে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে। চট্টগ্রাম ৫ আসনটি বিএনপি’র দূর্গ বলে খ্যাত। আর এ দূর্গ তৈরির অসাধারণ কারিগর ছিলেন আমার সম্মানিত মরহুম পিতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। এ দূর্গ তৈরী করেছেন তিলে তিলে। দীর্ঘ ২৩ বছরের ফল। তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান ২৭’ মে ২০১৮। তিনি চারবারের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন দলকে ব্যবহার করে, না সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, না তার সন্তানদের কে দুর্নীতি করতে পশ্রয় দিয়েছেন। দেশ এবং দলকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোবেসে চিরশয্যায় শায়িত হয়েছেন।
আজ আমি এ আসনে প্রার্থী হওয়াতে অনেকের টনক নড়ে উঠেছে। কারণ তারা সকলে অবগত আছেন, মরহুম ওয়াহিদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে। তারা তিনি জীবিত থাকাকালীন তাঁর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেননি, তাঁর মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম ৫ আসন কে কুক্ষিগত করার কু-মানসে, অবলিলায় একটা মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামী করে বিভিন্ন মন্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন মিডিয়ায়। এ মামলা আদালতে বিচারাধীন অবস্থায়। এ মামলা নিয়ে মন্তব্য করা আদালত অবমাননার শামিল নয় কি? হ্যাঁ আমি ১৬৪ ধারার জবানবন্দী দিয়েছি তাতে কি আমি এ অপরাধ স্বীকার করেছি? ১৬৪ ধারার জবানবন্দী দুই ধরণের হয়ে থাকে, Exculpatory এবং Inculpatory। যারা এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলছেন তারা বিষয়টি অবশ্যই জেনে নিবেন। আমি আইনজীবী, যে কোন মামলায় লড়ার অধিকার আমার আছে। সরকার কর্তৃক এমন কোন আইন প্রনয়ন হয়নি একজন আইনজীবী কোন মামলা করতে পারবে বা কোন মামলা করতে পারবেনা। হ্যাঁ, সে আইন প্রনয়নের পর , তা যদি আমি না মানতাম তাহলে আমি প্রণীত আইন না মানার ক্ষেত্রে অপরাধী হতাম। আইনত আমাকে আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত না করা পর্যন্ত, আমি অপরাধী নয়।
আমি একজন অবিসংবাদিত রাজনৈতিক বাবার মেয়ে। তাই আমার জাতীয়তাবাদী দলের এবং আমার জনপ্রিয়তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ অপকৌশল কখনো সুফল বয়ে আনতে পারেনা। জনপ্রিয়তা যদি থেকেই থাকে তা দৃঢতার সাথে মোকাবিলা করুন, অপকৌশল প্রয়োগ করে নয়।’