একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এখন জটিল অঙ্ক কষছে। বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নথি যাচাই-বাছাই করে মহাজোট এবার প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে । মহাজোটকে বিজয়ী করতে কৌশলগত কারণে শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়ার জন্য মহাজোটের সবাই প্রায় একমত হয়েছেন। এজন্য দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।
মহাজোটের এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও তাদের জোট। এ কারণে আবেগে প্রার্থী না দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এমন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মরিয়া মহাজোট। তবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এবারও বেশ কয়েকটি আসন নিয়ে আবদার করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিকল্প ধারাও দু-একটি আসনে তাদের প্রার্থী চায়। সবমিলিয়ে মহাজোটে এখন চলছে জটিল হিসাব-নিকাশ।
সমঝোতার মাধ্যমে জোটগতভাবেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের শরিক কয়েকটি ছোট দলের আবদার ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অনুরোধ শেষপর্যন্ত রাখবেন কি-না তা সময়ই বলে দেবে। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে জয় পেতে প্রতিটি আসনে শক্ত প্রার্থী দিয়েছে। এ কারণে এবার মহাজোটে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উপর সকল ক্ষমতা ন্যস্ত করেছেন নেতারা। শুধু তাই নয়, মহাজোটকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ৪ বাঘা নেতাকে এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের দলের প্রার্থীর পক্ষে সাংগঠনিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
দলের হেভিওয়েটদের বাদ দেওয়ার পর কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও বাধ সেধেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি। কারণ তারা আসন ভাগাভাগি বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় চান । যার ফলে প্রার্থী ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে মহাজোটের। এমনটাই জানা গেছে জোটের হাইকমান্ডের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে। পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ ডিসেম্বর।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩০ থেকে ২৩৫ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ২৪৫ জন। সূত্র জানায়, শরিক দলগুলোর বাড়তি চাহিদার ব্যাপারেও ভেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সদস্য রয়েছেন ৩৫ জন। নির্বাচনে ৩৫ আসনের বাইরে জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দিতে কোনোভাবেই রাজি নয় জোট। এ কারণে পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের এলাকার ক্ষেত্রেও।
এদিকে অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। যদিও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩৮টি আসনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের হিসাব অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ-১ ও ৩, নোয়াখালী-৪, লক্ষ্মীপুর-৪, সিলেট-৬ আসন নিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে হতে পারে মহাজোটের হিসাব-নিকাশ।
আগামী নির্বাচন ও মহাজোটের আসন ভাগাভাগি বিষয়ে জয়নিউজের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম । তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি দেখছেন। শরিকরাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলেছেন । এখন প্রধানমন্ত্রী ও জোটনেত্রী সবদিক বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী দেবেন। তিনি বলেন, জয়ের বিকল্প নেই। জয়ের জন্য মহাজোটকে সব ধরনের ছাড় দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।
এদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা ভালো মনে করবেন, আমরা তা মেনে নেব। আমরা বিশ্বাস করি, মহাজোটের স্বার্থে, বিজয়ের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য প্রার্থী দেবেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, আমরা যে তালিকা দিয়েছি, সে তালিকা অনুযায়ী আসন পাব।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। শরিকরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে এসেছেন। দু-একদিনের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববারের (২ ডিসেম্বর) মধ্যে সব চূড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি। আশা করি, আমরা যে তালিকা দিয়েছি সে তালিকা অনুযায়ী আসন পাব।