পরিবারের বড় ছেলে ছিল আলী আকবর (২৩)। বাবা-মায়ের আশা ছিল ছেলেকে বড় আলেম বানাবেন। শিক্ষাজীবনের সর্বশেষ ধাপ দাওরায়ে হাদীসে বেশ ভালোভাবেই চলছিল তাঁর পড়াশোনা। এটুকু পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বিপত্তি হল ঢাকার পথে বের হওয়ার পর। বন্ধুর সঙ্গে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু জীবিত আর ফিরে আসা হয়নি তাঁর। বাড়ি থেকে অনেক দূরত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ধান ক্ষেতে মিলেছে তাঁর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ!
আকবর আলীর সহপাঠী নূরে আলম কান্নাভেজা কণ্ঠে জয়নিউজকে বলেন, ‘গত বছর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মিশকাত জামাতে ভর্তি হয়েছিলেন আলী আকবর। চলতি বছরে তিনি দাওরায়ে হাদীসে পড়ছিলেন। তাঁর সিট ছিল আমার পাশেই। মাদ্রাসার আহমদ মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলার ৬০০ নম্বর কক্ষে। ঢাকা যাওয়ার কথা বলে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে সে বাড়ি ফেরে লাশ হয়ে। ‘
নূরে আলম যোগ করেন, ‘আলী আকবরের সঙ্গে তাঁর এলাকার মাহামুদ নামে এক ছেলের ছিল গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেত। গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা যাওয়ার কথা বলে মাহমুদ আকবরকে নিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের হয়েছিল। ওই দিনের পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’
পুলিশ জানায়, গত ২৩ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নন্দনপুর এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে আকবরের হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অবশ্য উদ্ধারের পর পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে লাশের পরিচয় জানতে পারেনি। গত শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) পরিচয় পাওয়ার পর তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত আলী আকবরের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার চরশুবি দারুল উলূম আজিজিয়া মাদ্রাসার পাশে। তাঁর বাবার নাম আবদুল মালেক। কি কারণে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল হক।
ওসি (তদন্ত) জিয়াউল হক আরো জানান, নন্দনপুর এলাকার ধান ক্ষেতে অজ্ঞাত পরিচয়ের হাত-পা বাঁধা একটি গলা কাটা লাশ দেখে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করি এবং লাশের সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করি। এ ঘটনায় ২৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এরপর আমরা বিভিন্ন থানায় বার্তা প্রেরণ করি। তবে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ জয়নিউজকে জানান, নিহত আলী আকবরের বাবা তাঁর ছেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তাঁর খোঁজে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসেন। সেখানে তাঁকে খুঁজে না পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করতে গেলে আমার সাথে ওই ছেলের বাবার দেখা হয়। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার প্রেরিত বার্তার সাথে নিহতের পরিবারের বক্তব্য মিলে যায়। তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিই। এরপর গত শুক্রবার আলী আকবরের পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় গিয়ে তাঁর লাশটি শনাক্ত করে।
অন্যদিকে মাদ্রাসাছাত্র আলী আকবরের খুনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ধরতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের ছাত্র মুহাম্মদ আলী আকবরকে গলা কেটে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। তাঁর খুনীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে আকবরের মৃত্যুর খবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছড়িয়ে পড়লে এক হ্নদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসময় শোকাহত শিক্ষক ও তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জয়নিউজ/জুলফিকার