মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও শতাধিক সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিজিপির ১১৪ সদস্যকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২২৯ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কয়েকদিন ধরেই সীমান্তের ওপারে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছেন বিজিপির সদস্যরা। হাতে অত্যাধুনিক রাইফেল থাকা স্বত্বেও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির হাতে প্রাণ হারানোর ভয়ে ভীত তারা। অবশ্য বাংলাদেশ সীমান্তে আসার পর পরই তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে বিজিবি। আর গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ওই ঘটনাটি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই বিজিপি সদস্যরাই ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বান্দরবানের তমব্রু-কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি নানা রকম উসকানি দিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা যাতে আর মিয়ানমারে ঢুকতে না পারে এজন্য সীমান্ত ঘেঁষে একাধিক ট্রেঞ্চও তৈরি করেছিলেন।
এই বিজিপি সদস্যরা ২০১৪ সালের ২৭ মে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি লেম্বুরছড়ি সীমান্ত থেকে টহলে থাকা বিজিবির নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পরও বিজিপি সদস্যরা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীকালে বিজিবির হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দিন পর নায়েক সুবেদার মিজানের মরদেহ ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
একইভাবে ২০১৫ সালে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের হাতে হিংস্রতার শিকার হয়েছিলেন বিজিবির নায়েক রাজ্জাক। ওই বছরের ১৭ জুন ভোরে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে টহল দেয়ার সময় বিজিপি সদস্যরা নির্বিচারে গুলি করে। এসময় বিপ্লব নামে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অপহরণ করে নিয়ে যায় নায়েক রাজ্জাককে। দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ৯ দিন পর রাজ্জাককে ২৫ জুন সন্ধ্যায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আসামির মতো বন্দি করে ছবি তোলার পাশাপাশি এক বিজিপি সদস্য কামড়ে তার নাক ছিঁড়ে নিয়েছিলেন।
শুধু মিয়ানমার সীমান্ত নয়, ভারতীয় সীমান্তেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী চরম ধৈর্য এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশ সীমান্তে চলে এলেও তাদের নিয়ম অনুযায়ী ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয় বিজিবি। কিন্তু বিপরীতে বিএসএফ সদস্যরা নানা অজুহাতে সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীর পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও হত্যা করেছে।
বান্দরবানের জলপাইতলী সীমান্তে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
জেএন/এমআর