পাহাড় কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কিছু এলাকায় তা একদমই মানা হচ্ছে না। নগরীর পশ্চিম খুলশী জালালাবাদে পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা প্রশাসনের কোনো প্রকাশ ছাড়পত্র ছাড়াই নানান কৌশলে পাহাড় কেটে যাচ্ছে পাহাড়খেকোর দল।
অবাধে পাহাড় কাটার ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য বর্ধক প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়গুলো। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকার কিছু পাহাড়খেকো তাদের ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি খাস মালিকানাধীন পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি, দোকান পাট নির্মাণ শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাহাড় কাটার ঠিকাদারী দিয়ে আসছে বিভিন্ন পাহাড়ী ভূমির মালিকেরা।
এলাকাবাসীর দেয়া নানান তথ্যানুসন্ধান করতে ঘটনাস্থলে পৌছে পাহাড় কাটার ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানকার কাজের ঠিকাদারী নেওয়া সিন্ডিকেটের সদস্যদের তোপের মুখে পড়তে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।
সম্প্রতি পশ্চিম খুলশী জালালাবাদের অভ্যন্তরীণ পাহাড়ী এলাকার তিনটি স্পটে নতুনভাবে পাহাড়কাটার তথ্য পাই পরিবেশ অধিদপ্তর। ভূমির মালিক আড়ালে থেকে সিন্ডিকেটধারী কেয়ারটেকার কর্তৃক পাহাড় কর্তনের ব্যপক অভিযোগও উঠে আসে।
অভিযোগ পেয়ে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিদর্শক মনির হোসেন, পরিদর্শক ওমর ফারুক ও সঙ্গীয় কর্মকর্তাসহ একটি টিম সরেজমিনে স্পটগুলো পরিদর্শনে যায়।
পরিদর্শনে গিয়ে একাধিক পাহাড় খননের আলামত পাওয়া যায়। দেখা যায়, জালালাবাদস্থ ছায়ানীড় আবাসিক এলাকা, সীবিচ হাউজিং সোসাইটি ও বড়ইতলী এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্তনকৃত এসব পাহাড়গুলোর মালিক আলাউদ্দিন, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, জাবেদ আল মামুন, মো. আলাউদ্দিন, এডভোকেট আলামিন, টুটুলসহ আরো কয়েকজন।
তবে পরিদর্শণের সময় পাহাড়ি ভুমিগুলোর কোন মালিকপক্ষ উপস্থিত ছিলেন না। ফলে পাহাড় কাটার জবাব চেয়ে নোটিশ প্রদান করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন টিম।
সেখানে অবস্থানরত কেয়ারটেকারদের হাতে দেয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়, পাহাড় কাটার আগামী ১২ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন অধিদপ্তর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সী-বিচ হাউজিং, ছায়ানীড় আবাসিক, লোহাগড়া বড়ইতলী এলাকার পাহাড়ের মালিকেরা স্পটে উপস্থিত না থেকে পাহাড় কর্তনকারী সিন্ডিকেটদের কাছে কাজের ঠিকাদারী প্রদান করে।
সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়াই শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে দিনের দুপুরে নির্বিচারে পাহাড় নিধন করে যাচ্ছে।
মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তোড়জোড়ে কেউ কেউ পাহাড় কর্তনের মামলার আসামী হলেও স্থানীয় প্রতাপশালী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার ফলে তারা পাড় পেয়ে যায়।
ফলে নিশ্চিন্তে অন্য কোনো পাহাড় কাটার কাজে হাত দিতে পিছ পা হয়না, পাহাড়খেকোরা- এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
জেএন/পিআর