সর্বপ্রথম ১৯৩০ সালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়। প্রথম দিকে বিশ্বকাপ ট্রফিকে জুলে রিমে ট্রফি বলা হতো। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ছেলেদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে দেওয়া হতো জুলে রিমে ট্রফি।
১৯৭০ সালে যখন ব্রাজিল তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফিটি স্থায়ীভাবে নিজেদের আয়ত্তে নেয়। এরপরই থেকেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হাতে বর্তমান নকশার জনপ্রিয় ট্রফিটি তুলে দেওয়া হয়।
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা যে ট্রফি নিয়ে উৎসব করেছে, সেটার বয়স ইতোমধ্যে অর্ধশতক পেরিয়েছে।
১৯৭৪ বিশ্বকাপ থেকে নতুন ট্রফি দেওয়ার জন্য নকশা আহ্বান করে ফিফা। সে সময় ৭টি দেশের ৫৩ জন নকশাকার তাদের নকশা জমা দেন। পরবর্তীতে ওই নকশাগুলোর মধ্য থেকে চূড়ান্ত করা হয় বিখ্যাত ইতালিয়ান ভাস্কর সিলভিও গাজ্জানিগার নকশা।
ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রফি ধরা হয় গাজ্জানিগার বানানো ট্রফি। ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি ট্রফিটার বর্তমান মূল্য ২ কোটি মার্কিন ডলার (২১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। এর উচ্চতা ৩৬.৫ সেন্টিমিটার (১৪.৪ ইঞ্চি), ওজন ৬.১৭ কেজি।
তবে মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল যে ট্রফি পেয়ে থাকে, সেটা রুপার তৈরি। ওই ট্রফির উপর ২৩ ক্যারেট সাদা ও হলুদ সোনার প্রলেপ দেওয়া থাকে। উচ্চতার দিক দিয়ে ট্রফিটা ৪৭ সেন্টিমিটার (১৮.৫০ ইঞ্চি), ওজন ৪.৬ কেজি।
যদিও দামের দিক দিয়ে ছেলেদের ট্রফির ধারেকাছেও নেই মেয়েদের ট্রফি। এর দাম মাত্র ৩৭ হাজার ৪০০ ডলার (৪১ লাখ টাকার কিছু বেশি)। মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ হয় ১৯৯১ সালে। সে বছরই এই ট্রফি বানান লেবাননের ভাস্কর সাওয়াইয়া।
কাতারে ছেলেদের সর্বশেষ বিশ্বকাপে রেকর্ড ৪৪ কোটি ডলার (৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা) অর্থ পুরস্কার দিয়েছে ফিফা। চ্যাম্পিয়ন দল হিসাবে আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার (৪৩৩ কোটি টাকা)।
অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডে মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপেও রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পুরস্কার দিয়েছে ফিফা। সব মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ডলার (১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা)। আর চ্যাম্পিয়ন স্পেন পেয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার ডলার (৪৭ কোটি টাকা)।
এখানেও স্পষ্টতই পুরস্কারের অর্থে তফাৎ লক্ষণীয়। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বিশ্বকাপে অর্থ পুরস্কার ৪ গুণ বেশি, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ক্ষেত্রে সেটা ৯ গুণেরও বেশি হয়।
কিন্তু ফিফার সমতা নীতিতে একটি বাঁধা হতে পারে টিভি স্বত্ব। ছেলেদের বিশ্বকাপে যে পরিমাণ টিভি দর্শক হয়, মেয়েদের টুর্নামেন্টে তা হয় না। তাই মেয়েদের বিশ্বকাপ থেকে ফিফার আয়ের পরিমাণও কম। যদিও মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপে টিভি দর্শক ও মাঠে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড হয়েছে। এরপরও বিশাল ব্যবধান থেকেই গেছে।
মেয়েদের বিশ্বকাপের টিভি স্বত্ব থেকে আশানুরূপ আয় না হওয়ার জন্য সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুষেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তিনি দাবি করেছেন, সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় অফার না দেওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সমালোচনাও করেছেন।
এদিকে আগামী ১৭মে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ফিফার ৭৪তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফি একই রকম করার একটি প্রস্তাব পেশ করবে ফিফা। ট্রফিতে সমতা আনতে এর আকার, ওজন, উপাদান, মূল্য—সব মানদণ্ডে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আগামী ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে ছেলেদের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। ওর পরের বছর মেয়েদের বিশ্বকাপ। যদিও মেয়েদের বিশ্ব আসরের স্বাগতিক দেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তবে ফিফার আশা, এই দুই বিশ্বকাপ থেকেই ছেলে ও মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে একই ধরনের ট্রফি দেওয়ার প্রচলন শুরু করা। এটি লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
জেএন/পিআর