নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন কারাগারে বসে নগরবাসীর উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন। নগর বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী চিঠিটি জয়নিউজে পাঠিয়েছেন। পাঠকদের জন্য চিঠিটি তুলে ধরা হল-
আমি জেল থেকে বলছি
আসসালামু আলাইকুম,
আমি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-০৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী-চকবাজার) সংসদীয় আসনের প্রার্থী। চট্টগ্রাম কারাগারের নির্জন সেল থেকে আপনাদের কাছে আমি আমার কিছু কথা তুলে ধরছি।
গত ৭ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্টে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু নেতাকর্মীকে দেখতে গেলে ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে ঢাকার মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এমন একটা সময়ে আমাকে গ্রেফতার করা হল যখন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট আওয়ামীলীগ মহাজোটের সাথে ঐতিহাসিক সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘোষণা করলেন বিরোধীদলের আর কোন নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হবে না। কারো বিরুদ্ধে কোন গায়েবী মিথ্যা মামলা দেয়া হবে না। অথচ এর ঠিক দু’ঘন্টার মধ্যে ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টায় আমাকে গ্রেফতার করা হলো বিনা গ্রেফতারী পরোয়ানায়।
ডিবি অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকে গ্রেফতার করা হল কেন? আমার অপরাধ কি? উত্তরে বলা হল, আপনি নির্বাচন করবেন এটাই আপনার অপরাধ। আপনি জনপ্রিয় এটাই আপনার আপনার অপরাধ। এরপরে ঢাকায় ৫৪ ধারায় একটি মামলা দেখিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে একদিন ও কাশিমপুর কারাগারে প্রায় ১৫ দিন রেখে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আমি ঢাকা থাকতেই চট্টগ্রামে আমার বিরুদ্ধে ১০টি গায়েবী মামলা করা হয়। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম কোর্টে আমাকে হাজির করা হয়। আমার জামিন না-মঞ্জুর হয়।
কারাগারে আমাকে কোর্ট থেকে ডিভিশনের আদেশ দিলেও যথারীতি আমাকে নির্জন সেলে রাখা হয়। যেখানে ফাঁসির আসামিরা থাকে। চট্টগ্রাম কারাগারে আসার পর গত ১০ দিনেও আমার মায়ের সাথে এখনও পর্যন্ত দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
মিথ্যা গায়েবী মামলায় হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। দেশে আজ দুর্নীতি, দুঃশাসন, গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে। গুম, গুপ্ত হত্যা, নির্যাতন, মামলা, হামলা, বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সরকার। গত ১০ মাস ধরে তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে।
এমতাবস্থায় বাকলিয়া কোতোয়ালী চকবাজার সহ চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে একান্ত অনুরোধ রইল গত ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একজন রাজনীতিবিদ, পাশাপাশি একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার চেষ্টা করেছি। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে, কখনও অগ্নিদুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে, বন্যাদুর্গত এলাকায় কিংবা পাহাড়ধ্বসে অসহায় পরিবারদের মাঝে। বার বার রাজপথে আন্দোলন করেছি, আপনাদের যৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবি নিয়ে কিংবা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহের দাবি নিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কিংবা জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি নিয়ে।
আজকে যারা আমাকে কিছু গায়েবী মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দী রেখে খোলা মাঠে গোল দিতে চায়, হয়তোবা দেখা যাবে এরা এ সংসদীয় আসনের ভোটারও না। তাদের এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা একজন নিজেকে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ডা. শাহাদাত হোসেন মনে করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হউন। যে বাংলাদেশ হবে নিরাপদ, যেখানে আমার ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের যৌক্তিক কোটা সাংস্কারের দাবি পূরণ হবে। ৪ কোটি বেকার তাদের কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে পাবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও সাম্যতা-মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
সংগ্রামী ৯ সংসদীয় আসনের এলাকাবাসী, আপনাদের প্রতি দেশের এই চরম কান্তিকালে অনুরোধ থাকবে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোটের অধিকার স্ব স্ব ভোট সেন্টারে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করুন। ধানের শীষ প্রতীকে আপনার একটি মূল্যবান ভোট অন্ধকার কারাগারে থেকে আমাদের দেশমাতার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। আমি সহ হাজার হাজার নেতাকর্মী গায়েবী মামলার শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী আছি- তাদের মুক্তির পথ দেখাবে।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোক
ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। গণতন্ত্র মুক্তি পাক, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
ধন্যবাদান্তে/শ্রদ্ধান্তে
ডা. শাহাদাত হোসেন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের প্রার্থী।