ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত কামাল মিয়া। পাঁচ দিন আগে হয়েছে অপারেশন। হাসপাতালে তাঁর বিছানায় বসা তিনজন স্বজন আর পাশে আরও তিনজন। সুরুজ মিয়ার মাথার দুই হাত দূরেই রাখা হয়েছে ময়লার ঝুড়ি।
দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই রোগীর স্বজনদের এমন উপস্থিতি থাকে। এদের মাধ্যমেই রোগীর সংক্রমণ হতে পারে বা রোগী দেখতে গিয়ে স্বজনেরাও জীবাণু নিয়ে ফিরতে পারেন বাসায়।
রোগীর ব্যবহার করা ফাইল, বিছানা এবং অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণে থাকতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু। জীবাণুমুক্ত না করলে সংক্রমিত হতে পারে আরেক রোগী। এক রোগী থেকে অন্য রোগীর কাছে যাওয়ার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করার চর্চাও নেই অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬০ ভাগ বড় হাসপাতালেই নেই ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (আইপিসি) কমিটি নেই। বেশিরভাগ হাসপাতালেই নেই জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থাও।
এতে করে হাসপাতালের বিছানা, রোগীর ফাইল, চিকিৎসা উপকরণ এবং দর্শনার্থীর মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ভয়ংকর সব অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু। বাড়ছে সংক্রমণ, মৃত্যু ও চিকিৎসা ব্যয়। মাত্র ১৬ ভাগ হাসপাতালে নিয়ম মেনে দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক।
ঢাকা মেডিকেলের সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালের জীবাণুগুলো বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ট্রিটমেন্ট হতে হতে এদের রেজিস্ট্রেন্ট রেট অনেক বেশি থাকে। শুধু হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেই হাসপাতালের ইনফেকশন ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।
এক সময় ঢাকা মেডিকেলের নিউরোসার্জারি ও গাইনি বিভাগে সংক্রমণের হার ৪০ ভাগের বেশি ছিল। নানা ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন তা দশভাগের নিচে নেমেছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মনজুরুল হক বলেন, একটা রোগীর বাড়িতে থেকে ইনফেকশন হলে তাঁকে যত সহজে চিকিৎসা দেওয়া হয় আর যখন একজন রোগীর হাসপাতাল থেকে ইনফেকশন হয় তখন জীবাণুর ধরণ ভিন্ন হয়। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার ধরণওধরনওবানান সঠিক নয় পাল্টে ফেলতে হয়, এতে মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মঈনুল আহসান বলেন, আইপিসি কমিটি সব হাসপাতালে কার্যকর হলে হাসপাতালের সামগ্রিক ইনফেকশন বন্ধ করা যাবে। আর ইনফেকশন কন্ট্রোল করা হলে রোগীরা দ্রুত বাড়ি যেতে পারবে, কমে যাবে মৃত্যুর ঝুঁকি।
জেএন/এমআর