ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে গণহত্যা ‘ভয়াবহ নজির’ স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ক্রিয়াকলাপের তীব্র নিন্দাও করেছেন তিনি।
একইসঙ্গে ইসরায়েলের ‘নিপীড়ক সরকারকে’ তহবিল এবং অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা — ইসরায়েলের নাম না করেই — গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ভূখণ্ডটিতে গণহত্যা ‘ভয়াবহ নজির’ স্থাপন করেছে এবং মানব ইতিহাসে এটি ‘বড় লজ্জার’ বিষয় হিসাবে টিকে থাকবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে কংগ্রেসের এই সাধারণ সম্পাদক গাজায় হাসপাতালে বোমা হামলা এবং ডাক্তারদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনাও উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের ‘নিপীড়ক সরকারকে’ তহবিল এবং অস্ত্র সরবরাহের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের নামে গাজা উপত্যকায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে এবং এর ফলে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ‘মানবিক সংকট’ দেখা দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় যা করার অনুমতি দিয়েছে তা ইতিহাসে কেবল সমগ্র মানবতার জন্যই বড় লজ্জা নয়, মানব জাতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে থাকবে।’
তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় পরিচালিত গণহত্যার বিষয়ে বিশ্ব ‘অন্ধ’ এবং একটি পুরো জাতি যখন ‘সাহায্য ভিক্ষা চাইছে’ তখনও কেউ সেখানে পা রাখছে না।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আরও বলেন, ‘গণহত্যার বিষয়ে অন্ধ হলে বা (চোখ বন্ধ করে রাখলে) সেটি দায়মুক্তির সাথে পরিচালিত হয়, হাজার হাজার নিরপরাধ শিশুর নির্দয় হত্যাকাণ্ড থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, একটি সমগ্র জাতি অনাহারে থাকছে এবং সাহায্য ভিক্ষা করছে, তখন হাসপাতালগুলোতেও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে, ডাক্তাররা নির্যাতিত এবং অপমানিত হচ্ছে এবং রোগীদেরও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একটি নিপীড়ক সরকারের জাহাজগুলোকে আমাদের বন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের (ইসরায়েলি সরকার) আরও বেশি তহবিল এবং অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের অমানবিক তাণ্ডবকে আরও ত্বরান্বিত করা – এই সবই এখন একটি ভয়াবহ নজির স্থাপন করেছে।’
প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ না উঠালে সবাইকে এর জন্য ‘অকল্পনীয় মূল্য’ দিতে হবে।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ন্যায়বিচারের সমস্ত নিয়ম, মানবতা এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। মানবতাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে এবং আমাদের প্রত্যেককে একদিন এর জন্য একটি অকল্পনীয় মূল্য দিতে হবে যদি না আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর থেকে আওয়াজ না তুলি এবং আজ যা সঠিক তার পক্ষে না দাঁড়াই।’
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে দল হিসেবে কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে এসেছে। গত বছরের অক্টোবরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি (সিডব্লিউসি) ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে সমর্থন করে এবং এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করে।
এছাড়া ভারতের এই প্রধান বিরোধী দল হামাসের হামলার নিন্দাও জানিয়েছে। দলটি বলেছে, কোনও ধরনের সহিংসতার মাধ্যমে কোনও সমাধানে পৌঁছানো যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জেএন/এমআর