ভারতের উত্তরাখণ্ডের পর এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার লক্ষে বড় পদক্ষেপ নিল ভারতের আসাম রাজ্য সরকার। মুসলিমদের বিয়ে ও তালাক নথিভুক্তির ১৯৩৫ সালে তৈরি আইন ‘অসম মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ বাতিল করে দিল রাজ্যটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। শুক্রবার রাতে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এই আইন বাতিলের ঘোষণা দেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। শুক্রবার গভীর রাতে করা এক এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্টে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিতর্কিত আইনটিই বাতিলের সিদ্ধান্ত করেছে সরকার।’
দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন ‘বিয়ে নিবন্ধন আইনে ধর্ম নির্বিশেষে ন্যুনতম বয়সে সমতা আনার লক্ষ্যেই ব্রিটিশ আমলের এই আইন বাতিল করা হলো। রাজ্যে যে ৯৪ জন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছেন, সরকার তাদের এককালীন দুই লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে। নতুন করে মুসলিম ম্যারেজ আইন চালু করবে সরকার। তাতে সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়সের সীমা, মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর বিয়ের ন্যূনতম বয়স রক্ষা করা বাধ্যতামূলক হবে।’
ব্যাপকহারে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১৬ সালে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অসমে রাজ্য সরকার। কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে জানা যায় অল্প বয়সে মা হওয়ার ফলে বহু মহিলা অকালে গুরুতর রোগভোগের শিকার হচ্ছেন। এদের মধ্যে মারাও যাচ্ছেন অনেকে। রিপোর্টে আরো বলা হয় রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নাবালিকা বিয়েতেও রাশ টানা দরকার। এর পরেই কমিটির সুপারিশ মেনে নবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। টানা দুই বছর চলে অভিযান।
অভিযানে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় তিন হাজার ৪৮৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চার হাজার ৫১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সেই বছর অক্টোবরে দ্বিতীয় অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ৯১৫ জনকে। মামলা দায়ের হয় ৭১০ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, নাবালিকাদের অনেকেরই বিয়ে মুসলিম ম্যারেজ আইনে নথিভুক্ত করা আছে। ফলে আইনত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে পারেনি।কারণ মুসলিমদের বিয়ে নথিভুক্তির জন্য ১৯৩৫ সালে তৈরি আইন ‘অসম মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েদের যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছরের কম বয়সিদের বিয়ে নথিভুক্ত করার বিধান ছিল।
এর পরেই নাবালিকা বিয়ে আটকাতে মন্ত্রিসভার সম্মতিক্রমে আইন বাতিলের পথে হাঁটল হেমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, অসম সরকারের এই পদক্ষেপ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পুরোপুরি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
জেএন/এমআর