মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীসহ ৬টি অভয়ারণ্যে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এই সময়ে সরকারের প্রণোদনার চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন জেলেরা। নিবন্ধিত অনেকেই এই প্রণোদনা পান না বলেও জানান তারা।
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী থেকে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরছে জেলে নৌকা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে জেলেদের ইলিশ ধরার এই কর্মচাঞ্চল্য।
প্রতি বছরের মত এবারও পহেলা মার্চ থেকে দুই মাস ইলিশের অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এসময় জেলেদেরকে সরকারি প্রণোদনা হিসাবে মাসে ৪০ কেজি চাল দেওয়া হলেও সরজমিনে দেখা গেছে সবাই তা পায় না। ভোলা জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫ জন। অথচ এবার ৮৯ হাজার ৬০০ জনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রণোদনার চাল।
এদিকে ইলিশের জেলা চাঁদপুরেও ডাঙ্গায় নৌকা তুলে রাখতে শুরু করেছেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিকমত সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন তারাও।
চাঁদপুরের জেলেদের অভিযোগ, স্বাভাবিক সময়ে মাছ ধরতে গেলেও টাকা দাবি করে মৎস্য বিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যরা।
বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস জানান, বরিশাল বিভাগের ৩টিসহ ৬টি জেলার ৪৩২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা পালিত হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার সাওতাল পয়েন্ট থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পয়েন্ট পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার, ভোলা জেলার চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার, ভোলা জেলার চর ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার, বরিশাল জেলার সদর, মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলায় ৮২ কিলোমিটার, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জের ২০ কিলোমিটার এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, কোনো বাধা ছাড়াই অভয়ারণ্যে মাছ ডিম দিতে পারলে ইলিশের জীবনচক্র সম্পন্ন হবে এবং তারা মা ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ পাবে।
নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই নদী থেকে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা। তারা বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার সময়টা জাল, নৌকা ও অন্যান্য মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামত করবেন তারা।
জেলেরা জানান, এই সময়ে যেহেতু মাছ ধরতে পারবেন না, তাই তাদের কঠিন সময় পার করতে হবে। তারা সরকারের কাছে ১৫০ কেজি করে চাল দাবি করেছেন।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার ইংলার ইব্রাহিম মাঝি বলেন, ‘এই ২ মাসে আমরা নদীতে যেতে চাই না। কিন্তু ক্ষুধা আমাদের বাধ্য করে।’
বিভাগীয় মৎস্য অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ বছর এই ৬ জেলার জেলেদের প্রতি ভিজিএফ কার্ডে ৪০ কেজি চাল সরবরাহ করা হবে।
কিন্তু জেলেরা জানান, ২ মাসের জন্য এই চাল যথেষ্ট নয়।
বরিশাল জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ২ মাসের জন্য মাত্র ৪০ কেজি চাল অপ্রতুল। মাথাপিছু অন্তত ১৫০ কেজি চাল দিতে হবে।’
জেএন/এমআর