দেশে প্রথমবারের মতো যমুনা নদীর রুই মাছের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স (জীবন রহস্য) উন্মোচন করেছেন জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেফমুবিপ্রবি) একদল গবেষক।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণা সেলের প্রধান ড. মাহমুদুল হাছানের নেতৃত্বে একদল গবেষক রুই মাছের জিন রহস্য উন্মোচন করেন।
ড. মাহমুদুল হাছান জানান, ২০২২ সাল থেকে দুই বছর গবেষণার পর এ সাফল্য পেয়েছেন তারা।
জিনোম সিকোয়েন্সিং কী
জিনোম হলো একটি জীবের বৈশিষ্ট্যের জেনেটিক বিন্যাস বা নকশা। অর্থাৎ, প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এই জিনোমের নির্দিষ্ট বিন্যাস বা জেনেটিক কোডের ওপর নির্ভর করে। জেনেটিক কোড (ডিএনএ’র অংশ), যা নিউক্লিওটাইড বেজ (এ, টি, সি এবং জি) দ্বারা গঠিত এবং তা জীবের বিকাশ ও গঠনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বহন করে। এসব নির্দেশনার সমন্বয়ই হলো জিনোম।
আর জিনোম সিকোয়েন্সিং হলো এই নির্দেশনা বা বৈশিষ্ট্য বহনকারী জেনেটিক কোড ও এর বিন্যাসের ক্রম নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি। এটি একটি জীবের ক্রোমোজম, মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকা ডিএনএ’র জেনেটিক কোডের বিন্যাস ক্রমানুসারে অন্তর্ভুক্ত করে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান ড. মাহমুদুল হাছান বলেন, “জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবের অঙ্গ-সংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ সব জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এর জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা থেকে। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে কোনো জীবের জিনোমে সব নিউক্লিওটাইডসমূহ (জৈবঅনু) কীভাবে বিন্যস্ত রয়েছে তা নিরূপণ করা। একটি জীবের জিনোমে সর্বমোট জিনের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাজ পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যায়।
যেভাবে রহস্যের উন্মোচন
গবেষকরা জানান, প্রথমে যমুনা নদী থেকে রুই মাছ সংগ্রহ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি, জাপান এবং ভারতের সুপার কম্পিউটারে গবেষণাকাজ পরিচালিত হয়। এর মধ্য দিয়ে রুই মাছের ডিএনএ বা কৌলিক বৈশিষ্ট্যের সব তথ্য জানতে পারেন তারা।
এর মাধ্যমে রুই মাছের জাত উন্নয়ন সংরক্ষণ ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। একই সঙ্গে তা রুই মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতেও সহায়ক হবে। জীবন রহস্য উন্মোচনের এই সাফল্য রুই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মান বাড়াতে কাজে লাগবে। সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে রুই মাছ বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে উদাহরণ সৃষ্টি করবে।
বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে রুই মাছের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচনের তথ্য জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আলম খান, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম, রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন, যশোর জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার মো. মোজাম্মেল হোসেন ও গবেষক দলের সদস্যরা।
জেএন/এমআর