রাজধানীর বেইলি রোডে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সারি সারি পড়ে আছে এ ঘটনায় দগ্ধ লাশ। আপনজনদের মরদেহ নিতে আসরা স্বজনদের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা যেন ভারী হয়ে উঠেছে।
ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিহদের স্বজনদের আহজারিতে থমকে যাচ্ছে বেইলি রোড সহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ।
‘কোথায় গেলি ও সম্পূর্ণা, ও সান, ও পপি…। এ কী হয়ে গেল আমাদের? আগুনে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেল?’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে এভাবেই চিৎকার করছিলেন পীযূষ পোদ্দার।
বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তার বোন পপি, ভাগনে সান রায় (১০) ও ভাগনি সম্পূর্ণা রায় (১২)।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মর্গের সামনে কথা হয় পীযূষ পোদ্দার জানা, ভাগনি সম্পূর্ণা পড়ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আর সান রায় পড়ত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে। মা–বাবার সঙ্গে মালিবাগে থাকত তারা।
সম্পূর্ণা ও সানকে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন মামা পীযূষ পোদ্দার। স্কুল শেষে আবার বিকেলে তাদের বাসায় নিয়ে আসেন তিনি। সম্পূর্ণা ও সান মা পপি রায়ের সঙ্গে সন্ধ্যার সময় আসে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয়। সেখানেই সব শেষ।
বেইলি রোডের বহুতল ভবনের আগুনে সম্পূর্ণা, সানের মতো মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। সকলের অবস্থায় আশংকাজনক। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বহুতল ভবনের একটি ফ্লোরে থাকা কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। রেস্টুরেন্টে আসা শতাধিক মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে সেখানে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভবনে আটকে পড়ে যায় খেতে আসা মানুষরা।
আগুনের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস। ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। তবে উৎসুক জনতার ভিড়ে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। এতে নারীসহ অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র্যাব। মোতায়েন করা হয়েছে ৩ প্লাটুন বিজিবি ও আনসার।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, বেইলি রোডের কেএফসি ভবনের পাশে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে আগুন লাগার খবর আসে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে।
খবর পেয়ে প্রথমে চার ইউনিট, পরে আরও চারটি ইউনিট পাঠানো হয়। এরপর আরও চারটি ইউনিট কাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে মোট ১৩টি ইউনিট।
রাত পৌনে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যেই একের পর এক আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। বিভিন্ন ফ্লোরে খাবার খেতে আসা মানুষদের অনেকেই ছাদে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
ফায়ার সার্ভিস মই দিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে। ভেতরে আটকে থাকা অনেকেই ধোঁয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাত ১২টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা।
অনেকেই স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে কান্না করতে থাকেন। হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে সেখানে। অনেককেই দেখা যায় নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।
জেএন/পিআর