চট্টগ্রাম নগরের সিডিএ নিউ হর্কাস মার্কেটে এক ব্যক্তির বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান অবৈধভাবে দখলে রেখে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নাম ব্যবহার করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ফলে অবৈধ দখলদার রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী নেতা ও ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদের সভাপতি দাবিদার মো. সেকান্দর আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব চৌধুরী ফেঁসে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, নগরের নিউ সিডিএ হর্কাস মার্কেটের রয়েল প্লাজার কবির আহমদের সন্তান মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন গত ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে সিআর মামলা নং-২৮৫১/২৩ (কোতোয়ালী) দায়ের করেন।
মামলাটি ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালত থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৩ এর কাছে তদন্তভার দেন। সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের উপ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদন : তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, বাদী মোহাম্মদ ইকবালের উপস্থাপিত দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তার পিতা হাজী কবির আহম্মদ সিডিএ নিউ হকার্স মার্কেট ক্ষুদ্র দোকানদার সমবায় সমিতির একজন শেয়ারদারি সদস্য ছিলেন।
২০০৬ সালের ২৫ জুন সিডিএ নিউ হকার্স মার্কেট ক্ষুদ্র দোকানদার সমবায় সমিতি থেকে তিনি ২১১ ও ২১১/এ নং দোকান “স্থায়ী বরাদ্দপত্র” মূলে বরাদ্দ পান। মামলার বাদি মোহাম্মদ ইকবাল ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন। তার পিতা স্থিত ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের শেষের দিকে মৃত্যুবরণ করেন।
পরে মোহাম্মদ ইকবালের ভগ্নিপতি খাইরুল মোস্তফা ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি একটি অস্থায়ী ভাড়ানামা চুক্তিপত্র মূলে ২১১/এ দোকানটি ১ নং আসামি মো. সেকান্দর আলম চৌধুরীর কাছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান পরিচালনা করার জন্য ভাড়া দেন।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছরের জন্য দোকান ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। মোঃ সেকান্দর আলম চৌধুরীর সাথে নতুন করে কোনো চুক্তি সম্পাদন না করে প্রতিমাসে ভাড়া নেওয়া হয়।
২০১৮ সালে বিদেশ থেকে মোহাম্মদ ইকবাল দেশে আসলে তার পিতার নামীয় বরাদ্দকৃত দোকানটি নিজে পরিচালনা করবেন বলে সেকান্দর আলম চৌধুরীকে জানান।
ওই সময় মোহাম্মদ ইকবাল দেখতে পান সেকান্দর আলম দোকানটিতে ব্যবসা না করে ২ নং আসামি আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর সহায়তায় দোকানটি “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ” এর নামে নামকরণ করে ব্যানার লাগিয়ে একটি রাজনৈতিক অফিস খুলেছেন।
এতে সেকান্দর আলম চৌধুরীর সভাপতি এবং আব্দুল মোতালেব চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক পরিচয় প্রদান করে থাকেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, সেকান্দর আলম চৌধুরী দোকান ভাড়া নেওয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ সিডিএ নিউ হকার্স মার্কেট ক্ষুদ্র দোকানদার সমবায় সমিতির কাছে ৩৪ হাজার ৭৯২ টাকা বকেয়া হয়।
সমিতি মামলার বাদি মোহাম্মদ ইকবালকে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য একটি নোটিশ প্রদান করেন। দোকানের ভাড়াটিয়া টাকাগুলো পরিশোধ না করলে দোকানের মালিক মোহাম্মদ ইকবাল ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তা পরিশোধ করেন।
পরে মামলার বাদি ইকবালকে সেকান্দর আলম চৌধুরী ভয়ভীতি দেখায়। দোকানটি জোর পূর্বক অবৈধভাবে দখলে রাখে। সমস্ত অপরাধ কাজে আব্দুল মোতালেব চৌধুরী তাকে সহযোগিতা করে আসছেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
তদন্তে সুপারিশ : ১নং আসামি সেকান্দর আলম চৌধুরী দোকানটি তার নিজের নয় জেনেও অবৈধভাবে মালিকানা দাবি করায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ ইং এর ৪(ক) ধারায় এবং ২নং আসামি আব্দুল মোতালেব চৌধুরী ১নং আসামিকে অবৈধ মালিক হিসাবে সহযোগীতা করায় একই আইনের ১৬ ধারায় অপরাধ করেছে।
জেএন/এনকেটি