দলীয় কোন্দলে জর্জরিত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি। চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রশ্নেও দলটিতে চলছে টানাপোড়েন। পাশাপাশি হামলা-মামলা, কারাবাসে পর্যুদস্ত দলটির নেতারা।
অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ দলটির সবাই এখানে নেতা মানেন একজনকেই। তার নাম সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের প্রবেশদ্বার আনোয়ারা-কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম-১৩) আসনের হালের নির্বাচনি চিত্র এমনই।
এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে নিয়ে ভোটের মাঠে নির্ভার আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দুই জন। তারা হলেন সাবেক সাংসদ সারোয়ার জামাল নিজাম ও শিল্পপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
এই আসনে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ জেলায় অনেকটা কোনঠাসা দলটি। হামলা-মামলা আর কারাবাসে দলীয় নেতারা পর্যুদস্ত। কারাগার আর আদালতে ঘোরাঘুরি করেই বেশিরভাগ সময় পার করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া দলীয় কোন্দলতো রয়েছেই।
তবে বিভেদ থাকলেও বিএনপি এই আসনটি পেতে মরিয়া অবস্থানে আছে। পাশাপাশি, চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রশ্নেও আছে টানাপড়েন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সেদিক দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনি এলাকায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আছেন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবেন বিশাল সংসদীয় আসনটির অভিভাবক তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে উপজেলার অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, অফিসপাড়া, চায়ের দোকানসহ সবখানেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে চায়ের দোকানগুলোতে জমে উঠেছে নির্বাচনি বিতর্ক।
আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে কে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। কেউ বলছেন সারোয়ার জামাল নিজাম আবার কেউ বলছেন মোস্তাফিজুর রহমান। কে পাবেন ধানের শীষ? অন্যদিকে আনোয়ারার মানুষ ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
জানা যায়, তৃণমূলে ভেঙে পড়েছে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম। আনোয়ারার জনপ্রিয় বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি। এর এক গ্রুপে আছেন সাবেক এমপি সারোয়ার জামাল নিজাম ও অপর গ্রুপে আছেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রয়াত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরীর অনুসারীদের নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট কবীর চৌধুরীর নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছেন।
ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, ‘আমি এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত আছি। আমার কাজের গতি দেখে নেত্রী আমাকে একটি মন্ত্রণালয় উপহার দিয়েছেন। আনোয়ারায় কোন দলীয় কোন্দল নেই। জনগণের ভোটে আগামী নির্বাচনেও আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সালাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, আনোয়ারার উন্নয়নের একমাত্র কাণ্ডারি সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি আনোয়ারার রাজনৈতিক অভিভাবক। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি প্রথমবারের মত ফায়ার সার্ভিস, থানা কমপ্লেক্স, চায়না ইকোনমি জোন, মইজ্জার টেক থেকে ক্রসিং পর্যন্ত ‘ওয়াই জংশন’ সড়ক বাস্তবায়ন করেছেন। আবার আনোয়ারা-চৌমুহনী থেকে বাঁশখালী-চকরিয়া হয়ে চার লাইনের কক্সবাজার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তিনি আনোয়ারা কলেজ সরকারিকরণ ও আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছেন। এছাড়াও কেইপিজেডে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। যা অন্য কেউ পারেননি। আনোয়ারা উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তার হাত ধরে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে এ আসনে জাবেদের বিকল্প নেই।
এদিকে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। শত বাঁধার মাঝেও মোস্তাফিজুর রহমান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আনোয়ারা-কর্ণফুলী বিএনপির ঘাটি, এখানে ব্যক্তি বড় বিষয় নয়, ধানের শীষে যে মনোনয়ন পাবেন সেই বিজয়ী হবেন। মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তরুণ ও তৃণমূলবান্ধব হওয়াতে অল্পতে সবার কাছে আপন হয়ে গেছেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক ভিপি বলেন, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নেই, এতদিন যোগ্য কোন নেতা ছিল না বলে দলে কিছুটা প্রতিযোগিতা ছিল। মোস্তাফিজুর রহমান এসে সবাইকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে সে দূরত্ব কমিয়ে এনেছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ারা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সালাউদ্দীন সুমন জয়নিউজকে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান একজন তরুণ রাজনীতিবিদ। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। তারপরও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সাবেক সাংসদ সারোয়ার জামাল নিজামের দেখা নেতাকর্মীরা পায় না, আন্দোলন সংগ্রামে তিনি মোবাইল বন্ধ রেখে বিদেশে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। দেশের মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন করছে। দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঐক্যফ্রন্ট দাবি জানালেও ইসি ব্যর্থ হয়েছে সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে। নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি, মামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে নির্বাচন করছি। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এই নির্বাচনে লড়ছি। সমাজের জন্য, আমার আনোয়ারা কর্ণফুলীবাসীর জন্য কাজ করতে চাই।
এ ব্যাপারে সাবেক এমপি সারোয়ার জামাল নিজামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।