চাহিদামতো চাঁদা না পেয়ে হামলা চালিয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এরপর এক সপ্তাহের বেশি পার হলেও কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। হামলায় প্রকৌশলীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিসও। এ ঘটনায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে সরকারের অগ্রাধিকার এ প্রকল্প যথাসময়ে উদ্বোধন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
লিখিত অভিযোগপত্র ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়নকাজ করে আসছে দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়নকাজের স্থানে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে জিতু, রনি, সজীব মৃধা, বাশার, রাজা, তুহিন তালুকদার, উজ্জ্বল তালকুদার, জুয়েল তালুকদারসহ ২০টি মোটরসাইকেলে ৪০ থেকে ৫০ জন বহিরাগত লোক পায়রা বন্দর এলাকায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব পাওয়া দেশি ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাহিদা অনুযায়ী মাসিক চাঁদা না পেলে পায়রা বন্দরে কোনো ধরনের কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
এরপর ফের কাজ শুরু হওয়ায় ১ মার্চ আবারও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, স্টোর কিপার মনির হোসেন, ড্রাইভার দুলাল মৃধাসহ পাঁচজন আহত হন। আহতদের কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকে বন্দরের উন্নয়নকাজ বন্ধ রেখেছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এই বিষয়ে ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে এসে আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে বলে। এর পরও আমরা স্বল্প পরিসরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ১ মার্চ ফের দলবল নিয়ে এসে আমাদের শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। আমরা নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা মোটা অঙ্কের টাকার দাবিতে অনড় থাকে। ফলে এখন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা ও চায়নিজ কোম্পানি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। কাজও চালু করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবসময় আমাদের পাহারা দেয়। তাই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এবিএম কোম্পানি এখানে হাজারা হাজার কোটি টাকার কাজ করছে। আমরা তাদের কাছে একটা কাজ চাইছি। তারা কাজ দেবে দেবে বলে আড়াই বছর ধরে ঘুরাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোনো কাজ দেয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বন্দরে আমাদের জমিজমা সব চলে গেছে। আমার চাচার কবর পর্যন্ত চলে গেছে এই বন্দরে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের সব টাকাও পাইনি। এখানে বাইরের মানুষ এসে কাজ করে, আমাদের একটা কাজ দিলে সমস্যা কী?’
ছাত্রলীগের এই নেতা অভিযোগে করে বলেন, ‘বন্দরের নাসির এবং আশিক আলী সিন্ডিকেট করে কাজ করে। তারা এখানে চাকরি করে জমিজমা কিনছে বন্দরের পাশে। ঢাকায় বাড়ি করছে। তারা পার্সেন্টেজ নিয়ে কাজ দেয়। সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা হয়নি। শুধু এবিএম কোম্পানির সঙ্গে আমাদের একটু তর্কাতর্কি রয়েছে। আমরা কারও কাজ বন্ধ করি নাই। তারাই বন্ধ করে নাটক সাজাইছে।’
এ বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ওই প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত একটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার লি জোইং এবং দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের আলাদা দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আগামী জুনের মধ্যে কাজ উদ্বোধন করা। তবে কাজ বন্ধ থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কাজ না হলে যথাসময়ে প্রকল্প উদ্বোধন করা যাবে না।’
জেএন/এমআর