চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে আবেদন করেন। যথারীতি বরাদ্দও পাওয়া যায়। নির্ধারিত সময়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সামনে যানটি পেয়ে উঠে পড়েন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের বিদায়ী বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তিনি ভেতরে ঢুকতেই দেখলেন আরও সাতজন উঠে পড়েছেন। তাদের কাউকেই চিনলেন না এই ছাত্র। আবার চালকের সম্মতিতে উঠায় তাদের কোনো প্রশ্নও করতে পারলেন না। তাঁর জন্য বরাদ্দ করা গাড়িটি কিছুদূর গিয়ে তাঁকেই নামিয়ে দিয়ে চলে যায় অন্য যাত্রীদের নিয়ে। নিরুপায় হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে। এতেই পুরো ক্যাম্পাসে পড়ে যায় শোরগোল, উঠে সমালোচনার ঝড়।
ভুক্তভোগী নাজমুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা নিয়ে অসন্তোষ বেড়েই চলছে। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বাস সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বরাবরই অসন্তুষ্ট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সেবার যাচ্ছেতাই ব্যবহার। রোগী পরিবহনের পরিবর্তে এসব যানে যাত্রী আনা নেওয়া করা এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী আমাকে অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এবং ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিবেন। কিন্তু, আমাকে মাঝ পথে নামিয়ে দিয়ে অন্য যাত্রীদের ঠিকঠাক গন্তব্যে নিয়ে যান। আমার নামে বুকিং করা অ্যাম্বুলেন্স যেখানে শুধু আমারই ওঠার কথা ছিল, সেখানে আমাকে ক্যাম্পাসে নিয়েও আসেনি। এ রকম ঘটনা চুয়েটে হরহামেশাই হচ্ছে। আমি জড়িতদের শাস্তি চাই।’
চুয়েট শিক্ষার্থী রোগীর জন্য বরাদ্দ হওয়া অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী উঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট গাড়িতে ওই সময় দায়িত্ব পালন করা চালক আল আমিন দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলিনি। দু’জন বাসচালক উঠে যান। তাদের আমি আর নিষেধ করতে পারিনি। তা ছাড়া ডা. মো. আবদুল্লাহ উঠেছিলেন এবং তিনি সঙ্গে মেডিকেল সেন্টারের এক কর্মচারীকে তাঁর পরিবার নিয়ে উঠতে দিয়েছেন। আমি ওই চিকিৎসকের আদেশ মানতে বাধ্য হওয়ায় তাদের আর নিষেধ করিনি।’
এ বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহর কাছে জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি জবাব দেননি। এ ছাড়া এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার রানী আকতারের সঙ্গেও কথা বলার জন্য একাধিকবার তাঁর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়, কিন্তু তিনিও কোনো জবাব দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। যদি কারও একান্তই জরুরি প্রয়োজনে গাড়ির দরকার হয় তবে যানবাহন শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আমি ঘটনাটি পর্যবেক্ষণের জন্য ওই চিকিৎসক ও চালক উভয়ের সঙ্গে কথা বলব।’
মেডিকেল সেন্টারের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে ই-মেইলে অভিযোগ জানানোর জন্য বলেছি। তার অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
জেএন/এমআর