ডাক্তারের পরামর্শে নেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক আগের মতো কাজ করছে না রোগীর শরীরে! আজকাল হরহামেশাই এমন কথা শোনা যায় রোগী-চিকিৎসকের মুখে।
সম্প্রতি গবেষকরা দাবি করেছেন এই কাজ না করার জন্য দায়ী আরও এক অ্যান্টিবায়োটিক ‘কোলিস্টিন’।
সামান্য জ্বর বা সর্দি-কাশির সময় চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে পোলট্রির হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস খাওয়ার কারণে। শুধু কি তাই? আমরা অনেকে পশুর মাংস খাই। মাংস স্বাস্থ্যকর করে তোলার জন্যও এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়, যা চরম ক্ষতি করে মানবস্বাস্থ্যের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘মানুষের শরীরে নানা রোগ প্রতিহত করতে যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ব্যবহৃত হয়, তাদের সবক’টি গুণাগুণই নষ্ট করে দিতে পারে এই কোলিস্টিন। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা নির্দিষ্ট সংক্রমণের শিকার না হলেও এটি খেলে তার ক্ষতি মারাত্মক। অতিরিক্ত হৃদরোগের ঝুঁকি, ওবেসিটি, এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারেরও কারণ এই কোলিস্টিন। অনেক দেশে ব্যবসায়িক স্বার্থে কোলিস্টিন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কিন্তু মানুষের মাঝে সচেতনতা আসেনি, যা খুবই শঙ্কার বিষয়।’
ভারতে সম্প্রতি লন্ডনের ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম একটি সমীক্ষা চালায়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতে বেশির ভাগ পোলট্রি মালিকরাই বেশি পরিমাণ মাংস ও ডিমের লোভে, পাখিদের কৃত্রিম উপায়ে স্বাস্থ্যবান করে তুলতে এই অ্যান্টিবায়োটিক অত্যন্ত উচ্চমাত্রায় ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া বাজারে যে প্রক্রিয়াজাত মাংস পাওয়া যায় যেমন বার্গারের ভিতরের মাংসের পুর, নাগেট্স বা ফ্রায়েড চিকেনের রেডিমেড প্যাকেটজাত চিকেনেও এই আন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি থাকে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার সতর্ক করে যে, মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক যেন কোনওভাবেই পশু-পাখির শরীরে ব্যবহার করা না হয়। কিন্তু অবস্থা আগের মতোই।
তবে এ থেকে বাঁচার সহজ উপায়ও বাতলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের পরামর্শ, মাংস-ডিম খাওয়ার আগে সচেতন হোন। তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট ও কম ওজনের হাঁস-মুরগি কেনা উচিত। একইভাবে ছোট আকারের কম মাংসের পশু কেনা উচিত। বাজারের প্রক্রিয়াজাত মাংস একেবারে না কেনাই ভালো। তা না হলে এই কোলিস্টিন ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে নানা মরণঘাতী অসুখের বিস্তার ঘটাতে পারে মানব দেহে।