ফাইভ জি চালুর দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল দেশের ৩ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক। তবে অনুমোদন পায়নি বাংলালিংক।
সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এই তিন অপারেটরকে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি ফাইভ জির একীভূত লাইসেন্স হস্তান্তর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
বিদেশে দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিওনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের (পিএসআই) কারণে বাংলালিংকের পর্ষদ সভায় লাইসেন্সের আবেদন করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়নি।
যে কারণে অন্যতম এ অপারেটর এ যাত্রায় লাইসেন্স পায়নি। দ্রুতই এ বিষয়ে আবেদন করার কথা এদিন রাতে এক বার্তায় জানিয়েছে অপারেটরটি।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একীভূত বা ইউনিফাইড লাইসেন্স পাওয়ার পর অপারেটরগুলোর ফাইভ জি বা এর চেয়ে উন্নততর প্রযুক্তির তারবিহীন সেবা দিতে আর কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না।
একই সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদী এই লাইসেন্সের আওতায় অপারেটরগুলোকে পৃথকভাবে টুজি, থ্রিজি, ফোর জি বা ফাইভ জির লাইসেন্স নিতে হবে না।
বর্তমানে দেশে ফোর জি প্রজন্মের তারবিহীন সেবা দিচ্ছে অপারেটরগুলো। এর আগে ফাইভ জির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও অপারেটরগুলোর দিক থেকে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, একীভূত লাইসেন্সে ফাইভজির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তরঙ্গের প্রাপ্যতা ও ‘ব্যাকহল ফাইবারের’ পাশাপাশি ‘পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ ব্যবহারের অনুমতি, অফশোর ক্লাউড সুবিধা, ‘রোল আউট’ বাধ্যবাধকতা ও নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয়।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ লাইসেন্স হস্তান্তর করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ নীতিমালার আলোকে অপারেটরগুলোকে ‘সেলুলার মোবাইল সার্ভিসেস অপারেটর লাইসেন্স’ এবং ‘রেডিও কমিউনিকেশন্স অ্যাপারেটাস লাইসেন্স ফর সেলুলার মোবাইল সার্ভিসেস’ এর আওতায় এই একীভূত লাইসেন্স দেয়া হয়।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইন্স ফর সেলুলার মোবাইল সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক গাইডলাইনটি অনুমোদন দেয়।
একীভূত লাইসেন্স দেয়ার এ সিদ্ধান্ত টেলিযোগাযোগ খাতে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, বিটিআরসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাতে ১৯ কোটি মোবাইল গ্রাহক এবং প্রায় ১৩ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে।
এ লাইসেন্সের আওতায় বহুমাত্রিক সেবা দেয়ার সুযোগ থাকায় অপারেটরগুলো তাদের বিনিয়োগের সুফল পাবে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। অপারেটরগুলোকে ডিজিটাল পণ্য চালুর পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বলেন, ফাইভ জি প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে অপারেটরদের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং একীভূত লাইসেন্স প্রদানের ফলে ফাইভ জিসহ নতুন প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানে আর জটিলতা থাকল না।
এ লাইসেন্সের আওতায় যেসব সেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলোকে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এটিকে ‘উদযাপনের মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এ লাইসেন্স দেশের সব অপারেটরদের জন্য একটি বড় অর্জন।
রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, এর ফলে অপারেটররা তাদের পছন্দ অনুযায়ী সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজে সেবা দিতে পারবে। মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এটি।
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লাইসেন্স না পাওয়া বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার রাতে এক বার্তায় বলেছে, ‘আমরা মনে করি এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
যেহেতু, আমাদের মূল কোম্পানি ভিওন নাসডাক ও ইউরো নেক্সটে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি, কোনো একটি লাইসেন্স গ্রহণের আগে তাদের কিছু করপোরেট গভর্নেন্সের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হয়, যা কিছুটা সময় নিচ্ছে। সেটা হয়ে গেলে আমরা তা পাওয়ার জন্য আবেদন করব।’
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ পর্যাপ্ত তরঙ্গ ও ‘একসেস ফ্রিকোয়েন্সি’ সহজলভ্য হয় সে লক্ষ্যে তাদের সংস্থা কাজ করছে।
সন্ধ্যায় বিটিআরসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে এসব লাইসেন্সের আওতায় দেশে সেলুলার মোবাইল সেবা দিচ্ছে অপারেটরগুলো।
জেএন/পিআর