সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিক ও ক্রুদের জাহাজের একটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছে। পরিমাণে অল্প হলেও তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সবাইকে বালিশ-কম্বল দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাহাজের এক ইলেকট্রিশিয়ানের পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইলেকট্রিশিয়ানের ভাতিজা বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে চাচাকে অনলাইনে দেখতে পাই। কিন্তু পরক্ষণেই অফলাইন হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগে সামান্য সময়ের জন্য তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সবাইকে বালিশ-কম্বল দিয়ে এক রুমে রাখা হয়েছে। খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
‘চাচা জানিয়েছেন, জাহাজ লোড থাকায় খুব কম গতিতে এগোচ্ছে। উনারা কিছুক্ষণের মধ্যে ডাটা বন্ধ করে দেবেন। সোমালিয়ায় পৌছে গেলে হয়তো আর কথা বলা সম্ভব হবে না,’- যোগ করেন ওই ভাতিজা।
এর আগে বুধবার সকালে জিম্মি হওয়া নাবিক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজু তার পরিবারকে জানান, সেহরিতে তারা অল্প খাবার পেয়েছেন।
রাজুর বন্ধু ইমরান বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে রাজু আমাকে ভয়েস মেসেজে জানায়, জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুরা ছিনতাই করেছে। আমরা ২৩ জন আটক আছি। আজ ভোররাতে আবার মেসেজ দিয়েছে, সেহরিতে সামান্য কিছু খাবার দিয়েছে। আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। আমাদের জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলবি। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।’
এদিকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’য় ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো খাবার আছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি রয়েছে ২০০ টন। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের।
আতিকউল্লাহ খান বলেন, ‘প্রক্সিমেটলি ২০–২৫ দিনের প্রোভিশন (রসদ) আছে স্যার। ২০০ মেট্রিক টন ফ্রেস ওয়াটার আছে। আমরা অলরেডি সবাইকে বলছি ফ্রেস ওয়াটার সেফলি ব্যবহার করতে। প্রোভিসনও (রসদ) আমরা ওভাবে হ্যান্ডেল করবো।’
এমভি আবদুল্লাহ’র মতোই ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এস আর শিপিংয়ের আরেক জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জিম্মি হন এমভি জাহান মনির ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন। তাদের একজন নাবিক মোহাম্মদ ইদ্রিস।
জলদস্যুদের হাতে প্রায় ১০০ দিন জিম্মি দশায় থাকা ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা যখন জিম্মি ছিলাম তখন কোনো সমস্যা হয়নি। খাবার দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ার সুযোগ দেন। তারা ইংরেজি ও আরবি ভাষায় কথা বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হয়নি।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সোমালিয়ানরা বাংলাদেশিদের প্রতি দয়া প্রবণ। বিশেষ করে মুসলিম হওয়ায় ও আফ্রিকা অঞ্চলে আমাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকার কারণে বাংলাদেশিদের শ্রদ্ধা করে।’
‘তাই কঠিন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে, বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই। মূলত মুক্তিপণ পেলেই নাবিক ও জাহাজ ছেড়ে দেবে। এটির জন্য হয়তো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে,’- মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।
এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর একটার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সেখানে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বুধবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে এমভি আবদুল্লা সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।
এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’।
বুধবার বিকেলে কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সকালেও নাকিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই ভালো আছেন। আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করাকে জোর দিচ্ছি। সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যা যা করার দরকার সব করবো। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, মুক্তিপণও চায়নি।’
জেএন/এমআর