চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন— তাদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অধীনে ‘প্রত্যয়’ নামক একটি নতুন স্কিম চালু করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করল।
যারা বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, তারাও কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি থাকা সাপেক্ষে এ স্কিমে যোগ দিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়ে।
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান একজন চাকরিজীবীর মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা— যেটি বেতনের চেয়ে কম হবে— তা কেটে নেওয়ার পাশাপাশি একই পরিমাণ অর্থ ওই চাকরিজীবীর অ্যাকাউন্টে জমা রাখবে। চাকরিজীবী চাইলে তার চাঁদার হার বাড়িয়ে তা ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে পারবেন।
স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে। এ ধরনের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ; সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআই, বিডা, বেজাসহ সব ধরনের কর্তৃপক্ষ; সরকারি ব্যাংক; শিক্ষা বোর্ড; রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি; ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সব ধরনের ইনস্টিটিউট; বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন বোর্ড; পেট্রোবাংলা, ওয়াসার মতো প্রতিষ্ঠান; টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ সব ধরনের কমিশন, সব ধরনের কাউন্সিল, সব ধরনের বন্দর ইত্যাদি।
সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকেন। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে।
সর্বজনীন পেনশনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সের সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। এগুলো হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। প্রগতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য। সমতা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাদের আয়সীমা বার্ষিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। আর সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য।
জানা গেছে, বর্তমানে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা যে পেনশন সুবিধার আওতাভুক্ত রয়েছেন, তাদেরও প্রত্যয় নামের নতুন পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান পেনশনের সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।
জেএন/এমআর