শেষ দিকে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেটার আর বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে ফিরেছে শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৭ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।
জবাব দিতে নামা শ্রীলঙ্কার তিন টপঅর্ডারকে শুরুতেই ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। তবে চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে নেমে পিচে আঠার মতো লেগে ছিলেন দুই ব্যাটার পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালঙ্কা।
কোনোভাবেই যেন তাদের রক্ষণ ভাগতে পারছেন না বাংলাদেশি বোলাররা। টাইগারদের সিরিজ জয় আটকে দিতে সতর্কতার সঙ্গে খেলে ১৮৩ বলে ১৮৫ রানের দুর্দান্ত জুটি করে ফেলেছেন তারা। মূলত, এই জুটির কাছেই হেরে যায় বাংলাদেশ।
লঙ্কানদের হয়ে বাকি কাজটি করেছেন দুুনিথ ওয়াল্লাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ৩৪ রানের জুটি করে হাসারাঙ্গা ফিরলেও বাকি ২ রান প্রমথ মাদুশানকে নিয়ে সহজেই তুলে নেন ওয়াল্লাগে।
নিশাঙ্কা হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। এটি ওয়ানডে ক্রিকেটে তার ষষ্ঠ শতক। ১১৩ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ হন লঙ্কান ওপেনার। তবে আশালঙ্কাকে ৯০ এর কোটায় আটকে ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ। ৯৩ বলে ৯১ রানে ব্যাট করা এই লঙ্কানকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান তাসকিন।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হেনেছেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারের গুড লেন্থের বল বুঝে ওঠার আগেই কানায় লাগিয়ে দিয়ে ফাস্ট স্লিপে থাকা সৌম্য সরকারে হাতে ধরা পড়েন লঙ্কান ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দো।
এরপর ১৬ রানে ব্যাট করা লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে মুশফিকুর রহিমের হাতের ক্যাচ বানান তাসকিন। পরের ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ১ রানের বেশি করতে দেননি শরিফুল। তাকে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে নিজের শিকার তুলে নেন বাঁহাতি পেসার।
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তাওহিদ হৃদয়ের ৫ ছক্কার হার না মানা ৯৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ২৮৬ রান করে বাংলাদেশ।
লিটন দাস আগের ম্যাচে আউট হয়েছিলেন প্রথম বলেই। গোল্ডেন ডাক দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করা এই ওপেনার দ্বিতীয় ম্যাচে আবারও শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরলেন। এবার খেলেছেন ৩ বল।
লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার করা প্রথম ওভারে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন। দলের খাতায় কোনো রান যোগ না হতেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকারের ৭২ বলে ৭৫ রানের জুটি। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শান্ত আজও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন। কিন্তু মাদুশঙ্কার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরতে হয় তাকে।
সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল শান্তর ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ৩৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ৪০ রান।
সৌম্য সরকার দারুণ খেলছিলেন। দেখেশুনে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন, ঢুকে পড়েন ওয়ানডের দুই হাজারি ক্লাবে। কিন্তু ২২তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সৌম্য ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ রিভার্স সুইপ হাঁকান। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মাদুশঙ্কা। ৬৬ বলে সৌম্যর ৬৮ রানের ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল একটি ছক্কার মার।
এক বল পরই দলকে বিপদে ফেলে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (০)। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার নিজের মোকাবেলা করা দ্বিতীয় বলে ডাউন দ্য উইকেটে হাঁকাতে গিয়ে পড়েন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। ৩ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিম আরেকবার হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেট হয়ে আউট হয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে সুইপ খেলতে গিয়ে এলব্ডিব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মুশফিক, ২৮ বলে করেন ২৫ রান।
মুশফিক আউট হওয়ার পর মেহেদি হাসান মিরাজ (১৮ বলে ১২) ও তানজিম সাকিব (৩৩ বলে ১৮) কিছু সময় সঙ্গ দেন হৃদয়কে। এরপর তাসকিনকে নিয়ে ২৩ বলে অপরাজিত ৫০ রানের জুটি করেন হৃদয়। অবশেষে ৭ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮৬ রান।
লঙ্কানদের হয়ে ৪৫ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেন স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দিলশান মাদুশঙ্কা ২টি ও প্রমথ মাদুশান নেন ১টি উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও শরিফুল।
জেএন/এমআর