জয়ের লক্ষ্য ৫১১ রানের। টেস্টে রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ডই ৪১৮ রানের বেশি নেই। সিলেট টেস্টে তাই জয়ের স্বপ্ন অবান্তর। তবে বাংলাদেশ কতটা লড়াই করতে পারে, সেটাই ছিল দেখার।
কিন্তু লড়াইয়ের মানসিকতাটা তো থাকতে হবে! বাংলাদেশি ব্যাটাররা যেন ভেবেই বসে আছেন, হারবই যখন তাহলে আর খেলে লাভ কী! টেস্টের মতো ফরম্যাটে তারা অনেক বাইরের বল চালিয়ে খেললেন, প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকানোর মতো দুঃসাহস করে উইকেট বিলিয়ে দিতেও দ্বিতীয়বার ভাবলেন না।
দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দিন শেষেই সিলেট টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় হারের শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জিততে হলে করতে হবে আরও ৪৬৪ রান।
রান তাড়ায় নেমে ৯ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জয়ের আউটটা তবু মানা যায়। বিশ্ব ফার্নান্ডোর বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েছেন এই ওপেনার (০)। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি।
তবে অধিনায়ক শান্ত যেভাবে আউট হলেন, সেটাকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলতে হবে এক কথায়। কাসুন রাজিথার অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বলে ড্রাইভ খেলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন শান্ত (৬)।
অধিনায়কের দেখানো পথ ধরে জাকির হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপুরা দ্রুতই ফিরেছেন। জাকির আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন, তবে সেই আত্মবিশ্বাসী ইনিংসটা থেমেছে ১৯ রানেই। লাহিরুর কুমারার বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাকির।
শাহাদাত হোসেন দিপুও সুইংয়ে বিভ্রান্ত। বিশ্ব ফার্নান্ডের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন শূন্য করেই। ঠিক পরের বলেই লিটন দাস যেভাবে খেললেন, চোখ কপালে ওঠার মতো।
দলের বিপর্যয়ে হাল ধরবেন কি, ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন লিটন। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, বল সোজা উঠে যায় আকাশে। সহজ ক্যাচ নেন ম্যাথিউস। গোল্ডেন ডাক লিটনের। ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১০.৪ ওভারে ৪১৮ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। একই টেস্টে দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড উপহার দিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তারা।
একইভাবে দ্বিতীয় ইনিংসেও জোড়া সেঞ্চুরি উপহার দিলেন এই দুই ব্যাটারই। ১০৮ রানে করে আউট হন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে কামিন্দু মেন্ডিস শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১৬৪ রানের বড় ইনিংস খেলে দেন কামিন্দু। ২৩৭ বল মোকাবেলায় গড়া এই ইনিংসে ১৬টি চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা হাঁকান এই ব্যাটার।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানে ৪টি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুটি করে উইকেট নাহিদ রানা আর তাইজুল ইসলামের।
কামিন্দু মেন্ডিসের এটা মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট এবং তৃতীয় টেস্ট ইনিংস। এর মধ্যে দুই ইনিংসেই জোড়া সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সারপ্রাইজিং ক্যারিয়ার শুরু হলো তার, নিঃসন্দেহে বলা যায়।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও একই চিত্রনাট্য। ১২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর একইভাবে জুটি গড়ে দাঁড়িয়ে যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর কামিন্দু মেন্ডিস।১৭৩ রানের অনবদ্য জুটি গড়ার পর অবশেষে বিচ্ছিন্ন হন ডি সিলভা-মেন্ডিস জুটি।
১৭৯ বলে ১০৮ রান করা লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভার উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দলীয় রান এ সময় দাঁড়ায় ২৯৯। এরপর কামিন্দুর দেড়শোর্ধ্ব ইনিংসে লিড ৫০০ ছাড়ায়।
অথচ ৯২ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করতে নামার পর দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলেই লঙ্কানদের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিলো বাংলাদেশের বোলাররা। দিন শেষে করেছিলো তারা ৫ উইকেটে ১১৯ রান নিয়ে।
যদিও ৫২ রান করা দিমুথ করুনারত্নে আউট হওয়ার পর লঙ্কানরা রাতের প্রহরী (নাইটওয়াচম্যান) হিসেবে উইকেটে পাঠায় বিশ্ব ফার্নান্দোকে। ২ রান নিয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন। সঙ্গে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা অপরাজিত থাকেন ২৩ রানে।
আজ তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামার পর বিশ্ব ফার্নান্দোকে দ্রুতই সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার খালেদ আহমেদ। ২৪ বলে ৪ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
জেএন/এমআর