চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনে-রাতে সব সময়ই বিদ্যুৎ যাচ্ছে।
নগরের আসকার দিঘির পাড়ে আতিকুর রহমানের স্টেশনারি দোকান। ফটোকপি থেকে তার বেশি আয় হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ফটোকপি বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বেলা দেড়টার দিকে কথা হয় আতিকুরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎতের কথা বলে আর লাভ নেই। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাই থাকে না। এই আসে, এই যায়। কাজই তো করতে পারি না। কারেন্ট না থাকলে ব্যবসাও বন্ধ। তারপরও দোকান খুলে বসে আছি। কী করব আর।
আতিকুর বলেন, তারউপর এখন রোজা রমজানের দিন। ইফতারির সময় পর্যন্ত কারেন্ট থাকছে না। গরমের জ্বলায় অতিষ্ঠ।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আতিকুর রহমান।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে লোডশেডিং বেড়েছে। এলাকাভেদে দিনে ছয় থেকে আটবার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ না পাওয়ায় একদিকে যেমন রোজাদারদের দুর্ভোগ বেড়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যও।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। বিপরীতে আইপিপি কেন্দ্রে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ মিলছে ১২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ মিলছে কম।
গতকাল বুধবার দিনে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি। বিপরীতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ মিলেছে ৮৫০ মেগাওয়াট। এদিন চট্টগ্রামে লোডশেডিং ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। রাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। লোডশেডিং ৩০০ থেকে কমে ১৫০ মেগাওয়াটে নেমে আসে।
দিনে ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং থাকায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা ভেঙে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৭-৮ বার লোডশেডিং দেওয়া হয়। শহরে কয়েক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ মিললেও দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ।
তবে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছে অন্য কথা। পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, গরমের কারণে এসির ব্যবসার বেড়েছে। যে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে এটি সাময়িক।
এদিকে বড় বড় শপিংমল গুলোতে দেখা যায় আলোর হরেক রকমের ঝলকানি। কোনো কোনো শপিং মলে লাগানো হয়েছে সারফি লাইটও। শুধু বড় শপিংমল নয় ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জ্বলছে বিভিন্ন ওয়র্ডের বাতি।
নিজাম উদ্দিন নামে বেসকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বলেন, ভাই ঘরে বিদ্যুৎ থাকে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিন্তু শপিং মলগুলোতে এসে দেখলাম এখানে বাতি অভাব নেই। যেখানে দুই তিনটা বাতি দিলে পর্যাপ্ত সেখানে দিয়ে রাখছে ২০ থেকে ৩০ টা বাতি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যে কোথায় পৌঁছালো তা সরকার এবং যারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে বড় বড় অফিসাররা তারা ও দেখছে না।
তিনি আরো বলেন, সব থেকে বড় বিষয় এখন রমজানের দিন। শান্তি মতো বসে যে ইফতারি বা সেহেরি করবো তারও উপায় নেই।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ব্যবসার ভরা মৌসুম। এ সময়ে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এসি না চললে ক্রেতারা আসতে চান না। দিনে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসি চালানো দূরের কথা- ফ্যানও চালানো যাচ্ছে না। এতে ক্রেতারা দোকান বিমুখ হচ্ছেন। ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
তবে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিপুল বকেয়া থাকায় আইপিপি কেন্দ্রগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে মোট উৎপাদন কমে গেছে। ঈদের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। আপাতত বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে পিডিবি।
জেএন/হিমেল/এমআর