চট্টগ্রামে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা এই আসনে দলীয় প্রার্থী চাইলেও জোটের হিসাব-নিকাশে শেষ পর্যন্ত কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিমকেই জোটগত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ আসনে বিএনপির তিন প্রার্থীর মধ্যে মীর নাছির ও মীর হেলালের প্রার্থিতা বাতিলের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাই হাল ধরবেন ধানের শীষের। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রার্থী না পাওয়ায় এখন তাই প্রশ্ন উঠেছে, মামলা আর পুলিশি হয়রানির শঙ্কা মাথায় নিয়ে ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে কতটা ঝুঁকি নেবেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
যদিও নেতারা মুখে বলছেন, ব্যক্তির পক্ষে নয়, তারা মাঠে থাকবেন ধানের শীষকে জয়ী করতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মী জয়নিউজকে বলেন, এ আসনের বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর সমর্থকরা এখন হতাশ। কারণ মামলার বেড়াজালে আটকে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ভেবেছিল, নেতার জন্য নির্বাচনি কাজে সক্রিয় হয়ে নিজেদের তুলে ধরবেন দলের সামনে। কিন্তু সে আশায় ছাই পড়ল তাদের।
তাদের বক্তব্য, যদি ইব্রাহিমের পক্ষে সক্রিয় হতে হয় তাহলে নির্বাচনি জটিলতায় পড়ে পুলিশি হয়রানি কিংবা মামলার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ পরিস্থিতিতে দলের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া ‘নতুন আগন্তুক’ ইব্রাহিমের জন্য ঝুঁকি নেবেন কেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি দলীয় সাবেক হুইপ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বলেন, দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এখন বৃহত্তর স্বার্থে জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে হাইকমান্ড। আমরা সবাই মিলে এ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ করবো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর হেলাল বলেন, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু হাইকমান্ড থেকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে হাটহাজারী থেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ আসনটি আমরা দলকে উপহার দিতে চাই।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা সোহেল জয়নিউজকে বলেন, দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান হাটহাজারী আসনে নির্বাচন করবেন। আমরা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে যাব। তবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল দল থেকে কাউকে এ আসনে মনোনয়ন দেবে।
উত্তর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তকিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইব্রাহিম হাটহাজারী আসনে নির্বাচন করবেন। তাই আমরা দেশনেত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে যা যা করতে হয় তার সবই করবো।
ঐতিহ্যগতভাবে হাটহাজারীতে (চট্টগ্রাম-৫) রয়েছে বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট। স্বাধীনতার পর এ আসনে একবারই বিজয়ী হয়েছিল নৌকা। সেই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন এমএ ওয়াহাব। এ সংসদীয় আসনের বাকি ইতিহাস বিএনপির। চারবার এ আসন থেকে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী ওয়াহিদুল আলম।
হালে এ আসনে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয়নি। একপ্রকার ‘খালি মাঠেই’গোল দিয়ে সাংসদ হয়েছেন তিনি। এবার বিএনপি থেকে কোনো নেতা প্রার্থী না হওয়ায় কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিম আনিসকে ঠেকাতে কতটা সক্ষম হবেন তা নিশ্চিত জানতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।