রাত পোহালেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ঈদকে ঘিরে মানুষের কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে।
শেষ সময়ে চলছে নানারকম সুগন্ধ আর ফ্লেবারের আতর বেচাকেনা। এখন ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতি চলছে শেষ মুহূর্তের।
ঈদের দিন নতুন পোশাকের সঙ্গে মাথায় টুপি আর শরীরে আতরের সুবাস না থাকলে সাজে পূর্ণতা আসে না। আর জামা কাপড়ের পাশাপাশি নতুন টুপি, সুগন্ধি আতর, সুরমা থাকবেনা, তা তো হয় না।
বুধবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, রিয়াজু্দ্দিন বাজার, চকবাজার, জমিয়তুল ফালাহ, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে টুপি, জায়নামাজ, আতর, সুরমা ও তসবিহর জমজমাট বিকিকিনি।
এসব দোকানে টুপি, আতর, আতরদানি, সুরমা, তসবিহ, জায়নামাজের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের নজরও কাড়ছে এসব পণ্য। সবাই হাতে নিয়ে পণ্য যাচাই করছেন, দরদামে মিললে কিনে নিচ্ছেন তারা।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের দোকানি নিজাম উদ্দিন জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আতর-টুপি বিক্রি হয়। তবে গত বছর রমজানের তুলনায় এবার বিক্রি কিছুটা কম। আতর-টুপির দামও বেড়েছে।
আন্দকিল্লাহ মসজিদ মার্কেট স্থায়ী দোকানসহ শহরের বিভিন্ন মোড় ও মসজিদের সামনে ভাসমান দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপছে পড়া ভীড় ছিল।
থরে থরে সাজানো বাহারি রঙের টুপি। আকর্ষণীয় নকশা আর নানা কারুকার্যে তৈরি এসব টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। দেশী টুপির পাশাপাশি নানান ধরনের নকশার আর আকৃতির বিদেশী টুপিও পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে।
নকশার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, কাজ ও মানভেদে এসব টুপি ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যে দেশি তৈরি সাধারণ টুপি ১০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে পাকিস্তানি টুপি ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, চীনা টুপি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, ইন্ডিয়ান টুপি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সৌসি টুপি ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রয়কর্মী মো. রাশেদ বলেন, চাঁদরাত পর্যন্ত ভালো বাণিজ্য হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে টুপি। এরপর আতর। জায়নামাজ, সুরমা, তাসবিহ বিক্রি তুলনামূলক কম।
এরমধ্যে ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুঁতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।
বাবার সাথে টুপি কিনতে আসা হোসাইন আরাফাত বলেন, বাসায় অনেক টুপি আছে। ঈদের দিন নতুন জামার সাথে নতুন টুপি পরার আনন্দ অন্যরকম। তাই বাবার সাথে টুপি কিনতে এসেছি। আমার দুই ভাইয়ের জন্যও টুপি নেব।
ক্রেতাদের টুপি দেখাতে দেখানে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, রমজানের শুরু দিকে ভাল বিক্রি হয়েছে। মাঝামাঝি সময়ে একটু ঠান্ডা ছিল। তবে এখন শেষ পর্যায়ে এসে ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। দেখছেন তো ক্রেতাদের কেমন ভীড়। এ ভীড় চাঁদরাতে আরও বেড়ে যাবে। প্রতিবছরই এমন হয়।
বিক্রেতা মো. রাসেল হোসেন বলেন, মোটামুটি দামের জায়নামাজ খুঁজছে ক্রেতারা। এর মধ্যে সুতির জায়নামাজ ২০০ টাকা থেকে শুরু এবং মখমলেরগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর সৌদি আরব ও কাতার, কাশ্মীর থেকে আনা পশমি এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জায়নামাজগুলোর বিক্রি ঢিলেঢালাভাবে চলছে।
বাজারে জেসমিন, বেলি, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, চকলেট, রয়েল, হাজরে আসওয়াদ, মাস্ক সুলতান, কদম, ফেরারি, রাসা ও ফিগোর মতো নানা নামের ও ঘ্রাণের আতর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এর মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যের ছোট শিশির আতরের দিকেই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া আতরের শিশির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতরের মধ্যে প্রতি তোলা জান্নাতুল ফেরদৌস, জেসমিন, রোজ ও দিলরুবা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫৫০ টাকা , রেড রোজ ১৫০০-১৮০০ টাকা, এরাবিয়ান বেলি ১২০০-১৫০০ টাকা, মর্নিং কুইন ২০০০-২২০০, আসওয়াদ ১০০০-১৪০০ টাকা, লাইলাতি ও মমতাজ ১৪০০-১৬০০ টাকা, দরবার, অ্যাঞ্জেল ও জমজম আতর ২৫০-৫৫০ টাকা, ভারতীয় বেলি ৫০০-৭০০ টাকা, ব্লু লেডি, ব্লু ফোরম্যান ৭০০-৯০০ টাকা, কুলম্যান ৮০০-১১০০ টাকা, দেশি আতর হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, বেলি ও নাইট ফ্লাওয়ার ৫০০-৭০০ টাকা, জৈতন ও নিমের মেসওয়াক ১০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মো. শওকত আলি নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদের দিন পাঞ্জাবিতে সুগন্ধি আতর মেখে ঈদগাহে যাব। তাই ৩ মিলি আতর নিয়েছি ২০০ টাকায়। এমনে সব সময় কিন্তু ব্যবহার করি না। ঈদ উপলক্ষে কেনা হচ্ছে।
রিয়াজুদ্দিন বাজারের আতর-টুপির দোকানের কর্মচারীরা জানান, আতর-সুরমা, টুপি, জায়নামাজ, তসবিহ বিক্রি হচ্ছে। সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত ও ফ্রান্সের আতরও এখানে পাওয়া যাচ্ছে। জায়নামাজও ৪০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম নেওয়া হচ্ছে।
স্কুল পড়ুয়া তাশরিফ বলেন, জায়নামাজ কিনতে। ঘরে অনেক জায়নামাজ থাকলেও নতুন জায়নামাজে ঈদের আনন্দটা অন্যরকম থাকে।
তিনি বলেন, ঘরে আগের জায়নামাজ আছে। আমার আর দাদার জন্য দুটি জায়নামাজ কিনতে এসেছি।
জেএন/হিমেল/পিআর