রাত পোহালেই বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ, বাংলা সন ১৪৩১-এর প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা ভাত আর নানা পদের ভর্তার সঙ্গে ইলিশ মাছ না থাকলে যেন জমেই না। তাইতো বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাঙালির কৃষ্টির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এসময়ে নববর্ষের সঙ্গে অবধারিতভাবেই এসে যায় ইলিশ প্রসঙ্গ।
কিন্তু গত কিছুদিন ধরেই বাজারে ইলিশের সরবরাহে টান। দামও বেশ চড়া। এরমধ্যে দুয়ারে নববর্ষ, যেখানে ইলিশ একটি বড় অনুষঙ্গ। তাই সরবরাহ ঘাটতির মধ্যে নববর্ষের চাহিদায় ইলিশের দাম এখন তুঙ্গে। বলা যায়, ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
তবে রাজধানীর ইলিশ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভালো দিক যে এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে মিশে গেছে নববর্ষ। রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষই এখন দূর-দূরান্তে নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন। ফলে ঢাকায় এবার ইলিশের চাহিদা কিছুটা কম থাকবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তসহ আশেপাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে। ছোট ছোট বাজারগুলোতে তো ইলিশের দেখাই নেই।
আড়তের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এবার ইলিশের প্রাপ্যতা অর্ধেক। নদী ও সমুদ্রে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না।
আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, এবার ৬০০ টাকার নিচে ইলিশের কেজি মিলছে না। আর সর্বোচ্চ এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায়।
চার-পাঁচটিতে এক কেজি হয় অর্থাৎ প্রতিটি মাছের ওজন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম- এমন সাইজের এক একটি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।
৫০০ গ্রামের ইলিশের কেজি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
যাত্রাবাড়ী আড়তের ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ওহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইলিশের সরবরাহ এবার গত বছরের অর্ধেক। জেলেরা মাছ পাচ্ছে না। তাই দামও বেশি। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাও কম।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে ৬০০ টাকার কমে কোনো ইলিশের কেজি নেই। সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রমক্ষমতার অনেকটাই বাইরে। আগে যে ক্রেতা এক হালি নিতেন, তিনি এখন হয়তো একটা নিচ্ছেন।’
ওহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন, নববর্ষ যদি ঈদের এক সপ্তাহ পর হতো, তবে ইলিশের দাম আরও বেশি থাকতো। কারণ, ঢাকায় এখন মানুষ অনেক কম। তাদের অনেকে এখন ঈদের ছুটিতে গ্রামে। যার ফলে ইলিশের চাহিদা কিছুটাও কম। গ্রাম থেকে সবাই ঢাকায় ফিরলে চাহিদা বাড়তো, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কিন্তু একই থাকতো। তখন দাম আরও চড়া হতো।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে আড়তে ইলিশ কিনতে এসেছেন সায়মা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ইলিশের দাম অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের আর কেনার অবস্থা নেই। ইলিশ দাম করলাম, এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বলেছি, প্রকৃত দাম এক হাজার টাকাও হবে না। যে ইলিশ আগে ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা এক হাজার টাকার ওপরে।’
জেএন/এমআর