৫২ বছর বয়সী শাকেরা খাতুন। দীর্ঘ একমাস অস্ত্রের মুখে জিম্মি থাকা ছেলের মুক্তির পর আনন্দের কান্না করছেন তিনি। এতোদিন নানা আশঙ্কায় থাকলেও এখন ছেলেকে ফিরে পাওয়ার প্রহর গুনছেন তিনি। সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়েছিল শাকেরা খাতুনের ছেলে মো. শামসুদ্দিনসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। শামসুদ্দিন ওই জাহাজের ওয়েলার পদে কর্মরত।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মুক্তিপণের ডলার ভর্তি ৩টি ব্যাগ জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়। মুক্ত হয়ে মধ্যরাতে ২৩ নাবিককে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। এরপর ২৩ নাবিক দুবাই থেকে প্লেনে দেশে ফিরবেন। সেখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা ফিরবেন স্বজনদের কাছে।
রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটায় শাকেরা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমকর্মীরা। ওই সময় ছেলে মুক্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এরপর শামসুদ্দিনের বোন জামাই বদরুল হকের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমকর্মীরা। তিনি বলেন, ‘নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। তারা এখন দুবাইয়ের পথে। দুবাই পৌঁছাতে আরও পাঁচদিন লাগবে বলে জানিয়েছে শামসুদ্দিন।’
একই জাহাজে জিম্মি ছিলেন চট্টগ্রামে আনোয়ার বাসিন্দা হোসেন মো. সাজ্জাদ। সাজ্জাদের ভাই মো. মোশাররফ বলেন, ‘রোববার ভোরে আম্মার সঙ্গে কথা বলেছে আমার ভাই (নাবিক সাজ্জাদ)। তারা এখন মুক্ত। সবাইকে দুবাই আনা হচ্ছে।’
‘আমি শুনেছি দুবাই আসার পর নতুন নাবিকেরা জাহাজের দায়িত্ব নেবে। জিম্মি ২৩ নাবিক সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরবেন। সে (নাবিক সাজ্জাদ) আম্মাকে বলেছে, জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএমের জন্য দোয়া করতে।’
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে বলেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আমরা সুসংবাদ পেয়েছি। আমাদের জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৩ নাবিকই অক্ষত অবস্থায় আমরা ফেরত পেয়েছি।’
কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, সমঝোতার পর নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। জাহাজের চারপাশে একাধিক আন্তর্জাতিক যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।
এর আগে গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
জেএন/এমআর