দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়া পেয়েছেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। যদিও ঈদের আগেই নাবিকদের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল পরিবারগুলো। অবশেষে গতকাল শনিবার রাতে অক্ষত অবস্থায় নাবিকেরা মুক্তি পাওয়ার পর তাঁদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা।
সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে ৩১ দিন পর জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহসহ মুক্তি পেলেন বাংলাদেশি ২৩ নাবিক। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মুক্তিপণের ডলার ভর্তি তিনটি ব্যাগ জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা।
আজ রোববার দুপুরে জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার জন্য এসআর শিপিংকে ধন্যবাদ। বন্ধু, পরিবার এবং সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ, যারা পুরো যাত্রায় প্রার্থনা করেছেন। ইউরোনাভফোর অপারেশন আটলান্টাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ বাংলাদেশকে। তোমাকে ভালোবাসি এবং তোমাকে মিস করছি বাংলাদেশ।’
অবশেষে নাবিকেরা অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পাওয়ায় দেশে তাদের পরিবারে যেন কেবল ঈদ শুরু হলো! চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার নাবিক মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এই দিনগুলো কীভাবে কেটেছে জানি না! আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে ঈদের আনন্দের দিন ছিল বিষাদে ভরা। আজ যেন আমাদের খুশির ঈদ। কেএসআরএম গ্রুপের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তারা তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করেছে।’
এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিকের মধ্যে নূর উদ্দিন (জিএস) কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আমিন শরীফের ছেলে। তাঁর সংসারে স্ত্রী ও চার বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। আনোয়ারার মোহাম্মদ সামসুদ্দিন শিমুল (ওয়েলার) বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। তাঁর সংসারে মা, স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। একই এলাকার সাজ্জাদ হোসেন (এবি) গাজু মিয়ার ছেলে। আসিফুর রহমান (এবি) বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর মেরিন একাডেমি এলাকায়। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আখতার হোসেন। তিনি ৫ মাস আগে চাকরিতে যোগ দেন।
গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালি জলদস্যুরা। এতদিন শ্বাসরুদ্ধকর একেকটা দিন কাটিয়েছেন নাবিকদের পরিবারগুলো।
এদিকে আজ চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাজসহ নাবিকদের উদ্ধারের গল্প শোনান কেএসআরএমের উপমহাব্যবস্থাপক শাহরিয়ার জাহান। তিনি বলেন, ১৯ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাতে পারে এমভি আব্দুল্লাহ। ২০ এপ্রিল উড়োজাহাজে করে সরাসরি চট্টগ্রামে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে নাবিকদের।
সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, ‘জিম্মিরা মুক্ত’, কথাটি শোনার পর নাবিকেরা অনেকে কেঁদে ফেলেন। মেহেরুল করিম বলেন, ‘জাহাজটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় আমাদের। যখন বলি, আপনারা এখন মুক্ত। আজকেই রওনা দেবেন। তখন নাবিকেরা অনেকে খুশিতে কেঁদে দেন। তারপর রাত ৩টায় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি ছেড়ে যান।’
জেএন/এমআর