বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগ ঘোষিত পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ‘বাতিল’ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ। একই সাথে পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিও ‘বাতিল’ করা হয়। এছাড়া উপজেলা যুবলীগ ঘোষিত বিলুপ্ত পৌরসভা এবং শাকপুরা ও পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ কমিটি বহাল থাকবে বলে গত ১৪ এপ্রিল জেলা কমিটির সভাপতি মো. দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো.জহুরুল ইসলাম জহুরের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
উপজেলা যুবলীগ কর্তৃক পৌরসভা ও পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার ১০ দিনের মাথায় এই সিদ্ধান্ত দিলো জেলা যুবলীগ। এ নিয়ে বোয়ালখালীতে চরমে চড়েছে যুবলীগ নেতাদের অন্তকোন্দল। এতে জেলা ও উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন তৃণমূলের নেতারা।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে জেলা যুবলীগের প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ২৩ ধারা অনুযায়ী উপজেলা কমিটি কোন ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত কিংবা নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করতে চাইলে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ কিংবা পরামর্শ না করে গত ৩ এপ্রিল বোয়ালখালী পৌরসভা, শাকপুরা ও পোপাদিয়া ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভা ও পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। যেটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত।’’
এতে আরও বলা হয়, ‘‘অবৈধভাবে গঠিত পৌরসভা ও পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে আগের কমিটি বহাল এবং একইসাথে শাকপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিও বহাল থাকবে।’’
এর আগে গত ৩ এপ্রিল উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হাজী আবদুল মান্নান রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো.সায়েম কবির যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো.রাসেল তালুকদারকে আহ্বায়ক করে ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট পৌর যুবলীগ ও শেখ রেজাউল করিম শাহেদকে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্য পোপাদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
একই তারিখে পৌরসভা যুবলীগ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ও দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং উপজেলা যুবলীগের সাথে সমন্বয় না করায় গঠিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। একইভাবে পোপাদিয়া এবং শাকপুরা ইউনিয়ন যুবলীগ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ও উপজেলা যুবলীগের সাথে সমন্বয়হীনতার অভিযোগে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক (জেলা কর্তৃক বাতিল) মো. রাসেল তালুকদার বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কি চলছে জানি না। সকালে এক সিদ্ধান্ত, বিকেলে আরেক সিদ্ধান্ত। কেন এমনটা হচ্ছে তা-ও জানি না। আমরা চাই যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম তৃণমূলে মজবুত হোক।’
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হাজী আবদুল মান্নান রানা বলেন, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম মজবুত করার লক্ষ্যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি বাতিলের মাধ্যমে উপজেলা কমিটির স্বকীয়তা বলে আর কিছু রইলো না। জেলার শীর্ষ নেতারা চাইলে এই বিষয়ে উপজেলা কমিটিকে তলব করতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এতে শীর্ষ নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে খর্ব হচ্ছে সংগঠনের গঠনতন্ত্র।’
উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আনিসুর রহমান বাবর বলেন, ‘চরণদ্বীপ ইউনিয়ন যুবলীগের গঠিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এ ব্যাপারে কোনো ধরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলার শীর্ষ নেতারাও অদৃশ্য কারণে নিরবতা প্রকাশ করে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা যুবলীগ কমিটিও মেয়াদোর্ত্তীণ। বিগত ২০১৩ সালে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, ২০১৭ সালে তা নবায়ন করা হয় বলে শোনা গেছে। ফলে সংগঠনটির কার্যক্রম অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।’
জানা গেছে, উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান গণিকে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর বিরোধিতা করায় ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো.সায়েম কবিরকে।
দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগ কমিটি মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এ বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কমিটি এ পর্যন্ত চারবার পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়েও এই ধরণের কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সম্মেলন ছাড়া কোনো কমিটি গঠন করা যাবে না। সেটি যে পর্যায়েরই হোক।’
এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি বোয়ালখালী হওয়ায় অত্র এলাকার প্রতি টানটাও বেশি। যুবলীগের প্রতিটি ভালো কার্যক্রমে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি ও করবো।’
জেএন/পূজন/এমআর