তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন দিন দিন বেড়ে চলছে তেমনি বেড়ে চলছে সাইবার অপরাধও।
আমরা অনেকেই সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টসহ ই-মেইল এবং কম্পিউটারের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি।
কিন্তু দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে সাইবার অপরাধীরা সহজেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে বিপদে ফেলতে পারে।
তাই অনলাইনে নিরাপদ থাকতে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। তার সাথে পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
কিছু কৌশল আছে যা প্রয়োগে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী ও নিরাপদ রাখা যায়:
১. অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জন্য কমপক্ষে আট অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, ততই নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে নিজের প্রিয়জন বা পছন্দের জীবজন্তু, বস্তুর নামের সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না।
পাসওয়ার্ডে অবশ্যই ছোট-বড় অক্ষরের পাশাপাশি একাধিক সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় অবশ্যই দুই স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা (টু ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন) ব্যবহার করা উচিত।
২. পাসওয়ার্ডে একাধিক সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করার ফলে জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপে দ্রুত প্রবেশের জন্য পাসওয়ার্ডগুলো সংরক্ষণ করে থাকে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। ফলে কম্পিউটার বা ফোনে সফটওয়্যারটি নামানো থাকলে বারবার পাসওয়ার্ড লেখার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টসহ ই-মেইলের পাসওয়ার্ড কম্পিউটারের ওয়ার্ড ফাইলে সংরক্ষণ করা একদম উচিত নয়। কোনো কারণে সাইবার হামলা চালিয়ে কম্পিউটারের তথ্য চুরি হলে পাসওয়ার্ডগুলো সাইবার অপরাধীদের কাছে চলে যেতে পারে।
ফলে পাসওয়ার্ডগুলো কাজে লাগিয়ে যে কোনো অ্যাকাউন্ট এবং ই-মেইল অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে তারা। তাই নিরাপদ থাকতে খাতায় বা কাগজে পাসওয়ার্ড লিখে ঘরে নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
৪. মনে রাখার জন্য সাধারণ মানের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন অনেকেই। যেমন password বা mypassword। আবার অনেকে ১২৩৪৫ অক্ষরের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড তৈরি করেন।
সাধারণ মানের পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। এতে পাসওয়ার্ডগুলো সহজেই হ্যাক করা যায়। তাই এ ধরনের সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।
৫. সহজে মনে রাখতে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি এক বা একাধিক ই-মেইল অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, এটি মোটেই নিরাপদ নয়। কারণ, একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে অন্য অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে।
৬. সাইবার হামলা চালিয়ে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করলেও অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে না সাইবার অপরাধীরা। ফলে ব্যবহারকারীরাও বুঝতে পারেন না তাঁদের পাসওয়ার্ড নিরাপদ আছে কি না।
তাই গুগলের পাসওয়ার্ড চেকআপ এবং মজিলার ফায়ারফক্স মনিটর সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিয়মিত অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হব।
৭. অনেকে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জন্য কিছুদিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের করেন। কিন্তু মাইক্রোসফট বলছে উল্টো কথা।
প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুদিন পরপর নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের কারণে ব্যবহারকারীরা নিজেদের অজান্তেই কোনো একসময় দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। ফলে সাইবার হামলার শঙ্কায় থাকেন তাঁরা।
জেএন/পিআর