ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ২৫ জুন পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মোহাম্মদ সোহেল এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাছির উদ্দিন মাহমুদকে মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার পিবিআই পরিদর্শক মো. মনির হোসেন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে পরীমণিসহ জুনায়েদ বোগদাদী জিমিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মেলেনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ৮ জুন দিবাগত রাতে আসামি পরীমণি অসৎ উদ্দেশ্যে বাদী নাছির মাহমুদকে ফাঁদে ফেলে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে ঢাকা বোট ক্লাবের নিয়ম উপেক্ষা করে ফ্রিতে তিন লিটারের ব্লু লেবেল মদ পার্সেল নিতে না পেরে বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি প্রদান করেন। পরীমণি ইচ্ছাপূর্বকভাবে বাদীর দিকে এসট্রে ছুড়ে মেরে তার ডান কানের উপরে মাথায় আঘাত করে নিলাফুলা জখম করেন। এ ছাড়া আসামিদের ছোড়া ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরায় বাদীর বুকে লাল চিহ্নিত স্ক্র্যাচ মার্ক যুক্ত জখম করে ও ক্লাবের বারের ভিতরে যত্রতত্র গ্লাস, কাঁচের বোতল এসট্রে ইত্যাদি ছুড়ে ফেলে তান্ডব করে। যার ফলে আসামি পরীমণির বিরুদ্ধে বাদীর আনা ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধ করেছে মর্মে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বারের ভিতরে তাণ্ডব করতে থাকলে সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকিকে বাদী নাছির আসামিদের নিয়ে বার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তখন আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমি তেড়ে এসে বাদী নাছির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে এবং হুমকি প্রদর্শন পূর্বক ২/৩ টা কিল ঘুষি মারেন। এতে আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে বাদীনির আনা অভিযোগ মতে ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে বাদীর আনা কোন অভিযোগের সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মামলার বাদী নাছির উদ্দিন মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, পরীমণি মিথ্যা নাটক সাজিয়েছিল। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সেই রহস্য উন্মোচন হয়েছে। আমি সব সময় ন্যায় বিচার চেয়েছি এখনো আমি ন্যায় বিচার চাই।
এর আগে ২০২২ সালের ৬ জুলাই আদালতে মামলাটি করেন ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে একই বছরের ১৮ জুলাই এ মামলাটি গ্রহণ করে আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন দামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান। ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয়তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালমন্দ করেন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির উদ্দিন মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
মামলায় আরও বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা নাসির উদ্দিনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও ভাঙচুর করেছেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমণি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
জেএন/এমআর