বাংলাদেশে শিশুখাদ্য হিসেবে সর্বাধিক বিক্রীত সেরেলাক ও নিডোয় উচ্চমাত্রায় চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমন তথ্য আসার পর দেশটির কোম্পানি নেসলের পণ্য দুটি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। তবে নেসলে জানিয়েছে, পুষ্টিমান, নিরাপত্তা ও স্বাদের সঙ্গে আপস না করে তারা চিনির মাত্রা কমাতে কাজ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শিশুখাদ্যে চিনি না রাখতে সুপারিশ রয়েছে। শিশুখাদ্যে চিনি যুক্ত করা হলে তা স্থূলতা ছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী কয়েকটি রোগের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের বেসরকারি সংস্থা পাবলিক আই ও ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নেসলে বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের জন্য তৈরি দুধ ও সিরিয়াল পণ্যে বাড়তি চিনি এবং মধু যুক্ত করে, যা স্থূলতা ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘন। এতে আরও বলা হয়, নেসলে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য বাজারজাত করা পণ্যে বাড়তি চিনি যুক্ত করে না। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর জন্য উৎপাদিত সেরেলাকে বাড়তি চিনি এবং মধু যুক্ত করে। এর মধ্যে বাংলাদেশে বাজারজাত করা পণ্যে চিনির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশে নেসলের ৯টি খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য থেকে একবার একটি খাওয়ালে তাতে প্রায় ৩ দশমিক ৩ গ্রাম বাড়তি চিনি শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) দেবব্রত রায় চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমাদের শিশুখাদ্যপণ্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল আয়রনসহ যথাযথ পুষ্টিমান বজায় রেখে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের জন্য উৎপাদিত পণ্যেও কোডেক্স মান পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর এসব পণ্যে মেশানো চিনি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। পুষ্টিমান, নিরাপত্তা ও স্বাদের সঙ্গে আপস না করে চিনির মাত্রা আরও কমাতে কাজ চলছে।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ‘শিশুখাদ্যে চিনি মেশানোর বিষয়টি নেসলে তাদের পণ্যে উল্লেখ করে। তবে দেশের মান অনুযায়ী কতটুকু মেশানো সহনীয় বা মান বজায় রাখা হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনা করা হবে। এসব খাবার শিশুদের উপযোগী নয় কিংবা শরীরে সত্যিই কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে– এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য আমরা এসব খাদ্যপণ্য বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।’
জেএন/এমআর