চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাদের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ।
এর আগে গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আজ বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিল মাসজুড়ে দাবদাহ থাকতে পারে।
এদিকে প্রচণ্ড রোদে কৃষকের ফল-ফসল ও সবজি বাগান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া জেলায় বিভিন্ন সড়কের রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। জেলার সকল স্কুল-কলেজ, কিন্ডারগার্টেনসহ কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার খুদিয়াখাদি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে আমার এক বিঘা মাল্টা বাগানের অধিকাংশ ফল ঝরে যাচ্ছে। বাগানের আমও পড়ে যাচ্ছে। এই মৌসুমে অনেক টাকার ক্ষতি হবে।
একই গ্রামের কৃষক রাজিব হাসান বলেন, গরমে ঘরের বাইরে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আমার দুই বিঘা পানের বরজে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। পান পাতা ছোট হয়ে যাচ্ছে। এই মৌসুমের প্রায় ৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতাম। তবে এখন আর সম্ভব না।
চলমান দাবদাহে ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহ বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমগাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখাপ্রশাখায় পানি স্প্রে করতে হবে। ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখুন। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়।
অপরদিকে, গরমজনিত কারণে জেলা সদর হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। গত তিন দিনে শিশুসহ ১৩৭ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে গরমজনিত রোগীর চাপ খুব একটা নেই। হয়ত কয়েক দিন পর থেকে বাড়তে পারে।
রোদে রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের টিম সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছে। যেখানে পিচ গলে যাবে তা দ্রুত মেরামত করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক্রমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিসের সহায়তায় জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়। স্কুল, কলেজ, কিন্ডারগার্টেনসহ কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে ২০০২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৪ সালের ২১ মে। সেদিন তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত বছর ২০২৩ সালের ১৯-২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
জেএন/এমআর