ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুর হাত থেকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবছর ৫ গুণী ব্যক্তিকে পদ্মবিভূষণ, ১৭ জনকে পদ্মভূষণ ও ১১০ জন পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
এদিন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানায়, অধ্যাপক (ড.) রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে শিল্পকলায় পদ্মশ্রী পদক প্রদান করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের একজন দক্ষ পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী, রবীন্দ্রসঙ্গীতের একজন নিবেদিতপ্রাণ অনুশীলনকারী।
ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন। এরপর রয়েছে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস নোটে এবারেন পদ্ম পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ করে।
নির্বাচনি প্রচারের তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও উপস্থিত ছিলেন৷
১৯৫৭ সালে রংপুর জেলায় বন্যার জন্ম। চাচা আব্দুল আলীর কাছ থেকে তার প্রাথমিক গানের পাঠ নেন। পরবর্তীকালে এই সংগীত চর্চা সনজিদা খাতুন এবং আতিকুল হকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার ছায়ানট এবং বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস (বাফা) এ অব্যাহত থাকে।
পরে তিনি ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস’ (আইসসিআর) থেকে শান্তি নিকেতনের সঙ্গীত ভবনে পড়ার জন্য বৃত্তি পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, গোরা সর্বাধিকারি, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নেন।
বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের কয়েক বছর পর তিনি কণিকা ব্যানার্জির অধীনে বর্ধিত সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সেশনে প্রশিক্ষণ নেন। ২০২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর তার গবেষণা সম্পন্ন করেন এবং এর জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
বন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে বন্যা একজন প্রবর্তকের ভূমিকা পালন করেন। এ লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গীত বিদ্যালয় ‘সুরের ধারা’ প্রতিষ্ঠা করেন।২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার আত্মজীবনী ও ফটোগ্রাফ সম্বলিত বন্যার পাঁচ হাজার গান সংরক্ষণ করে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে।
বন্যা শিল্প ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেরা নারী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার জন্য আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কার (২০০২), গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা (২০১১), ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার, বঙ্গ ভূষণ (২০১৭), ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১৭), পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক সঙ্গীত মহা সম্মান (২০১৭), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (২০১৯) থেকে অনারারি ডক্টরেট অফ আর্টস সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।
জেএন/এমআর