আজ রোগী দেখবেন না চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা

অনলাইন ডেস্ক

দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ বন্ধের পাশাপাশি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি ও নতুন রোগীর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। এই খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

- Advertisement -

একই দাবিতে গত শনিবার চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা।

- Advertisement -google news follower

আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাশ ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হন। ১৪ এপ্রিল অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে নগরের বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে হামলার শিকার হন ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলু। দুটি ঘটনার পর থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসকরা। ১৭ এপ্রিল জড়িতদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির নেতারা। দাবি আদায় না হওয়ায় পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্রধান সড়কের সামনে যান চলাচল বন্ধ করে মানববন্ধন করেন চিকিৎসকরা। এতে যোগ দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), পেডিয়াট্রিক্স ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমিতির নেতারা।

সেদিন হাসপাতালে জরুরি সেবা পাননি অনেক রোগী। কারণ বেশির ভাগ চিকিৎসক মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এভাবে রোগীদের বিপদে ফেলে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেন না অনেকে।

- Advertisement -islamibank

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কর্মসূচি পালনকারী চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ বিএমএ, স্বাচিপসহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকেন। নিজেদের জানান দিতে তারা যে কোনো ইস্যু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তা ছাড়া সামনে বিএমএ নির্বাচন। তাই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে আগ্রহী নেতারা দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনাকে ইস্যু করে আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের প্রতিনিয়ত মারছেন রোগীর স্বজনরা। উপযুক্ত বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। দাবি আদায়ে তাই আমরা নানা কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রামে চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের।’

স্বাচিপ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম বলেন, ‘আমরা রোগীদের জিম্মি করতে চাই না। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। প্রশাসন আমাদের দাবি মানলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমরা চাই চিকিৎসকদের সুরক্ষায় শক্তিশালী একটা আইন করা হোক।’

মায়ের চিকিৎসা করাতে ফেনী থেকে চমেক হাসপাতালে আসা তন্নি রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে এখানে মা চিকিৎসাধীন। প্রয়োজনের সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। জানতে চাইলে বলে, ডাক্তাররা কর্মসূচি পালনে বাইরে। চিকিৎসা না দিয়ে কর্মসূচি পালন বড়?’ আরও কয়েক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রোগী নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করার সময় দেখি গাড়িগুলো ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসকদের মানববন্ধন চলছে। চিকিৎসকরাই যদি এমন কাজ করেন, তবে রোগীরা যাবে কোথায়?’

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আড়াই বছরের রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটি চিকিৎসকদের অবহেলার প্রমাণ পায়। ২০১৮ সালের ২৯ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে চার চিকিৎসককে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার সময় নানা কর্মসূচি করে চট্টগ্রামের বিএমএ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘রোগীর মতো অসহায় আর কেউ নেই। দাবি আদায়ে কেন রোগীদের জিম্মি করতে হবে? চিকিৎসকের ওপর হামলার খেসারত কেন রোগীরা দেবেন? এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM