বগুড়ায় একটি বসতবাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন কিশোরীসহ চার নারী আহত হয়েছেন। রোববার রাত ৯টার দিকে শহরের মালতিনগর এলাকার মোল্লাপাড়ায় খড়ি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম ও রাশেদুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- রেজাউলের স্ত্রী রেবেকা ইসলাম (৩৮), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫), তার ভাই রাশেদুল ইসলামের মেয়ে জিম (১৩) ও প্রতিবেশী আলী হোসেনের মেয়ে তানজিম বুশরা (১৪)। তাদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় এই চারজনই বাড়িতে ছিলেন।
বিস্ফোরণের পর বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, সহোদর রেজাউল ও রাশেদুল বাড়িটিতে অবৈধভাবে পটকা তৈরির কারখানা পরিচালনা করত।
শহরের মালতিনগর মোল্লাপাড়ায় টিনের ছাউনি দেওয়া আধাপাকা চার ঘরের একটি বাড়িতে রেজাউল ও রাশেদুল পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তারা ওই এলাকার লাল মিয়া ও রেজিয়া বেগম দম্পতির ছেলে৷ বিস্ফোরণে মুহূর্তের মধ্যে বসতবাড়ির টিনের চাল সব উড়ে যায়৷ বাড়ির পাকা দেওয়ালগুলোসহ ঘরের খাট, আলমারি, আসবাব ও বেড়া দুমড়েমুচড়ে গেছে। বাড়ির ভেতরে আঙিনায় একটি বস্তায় বিপুল পরিমাণ পটকা ও তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার আছে। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণেও গ্যাস সিলিন্ডারগুলো অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। আর বস্তায় থাকা পটকাগুলোতে বারুদ ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আতিকুর রহমান নামে এক প্রতিবেশী বলেন, বিস্ফোরণ বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে উঠে। বেরিয়ে দেখি রেজাউলের বাড়ি একরকম উড়ে গেছে। তার স্ত্রীসহ চার মেয়ে বাড়ির টিন ও আসবাবের নিচে চাপা পড়ে আছে। সেখানে উপস্থিত মানুষদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরেক প্রতীবেশী সাকিব আল হাসান বলেন, বিস্ফোরণ শব্দ পেয়ে এখানে এসে দেখি বিধ্বস্ত অবস্থা। বাড়িটিতে রেজাউল ও রাশেদুল দুইভাই মিলে অবৈধভাবে পটকার কারখানা চালাতেন। সেখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
বাড়ির মালিক রেজাউল করিম বলেন, বিস্ফোরণ সময় আমি ও ভাই নামাজে ছিলাম। শব্দ পেয়ে বেরিয়ে দেখি সবশেষ। ঘটনার সময় বাড়িতে আমার স্ত্রী, মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে ও এক প্রতিবেশীর ভাতিজি ছিল। পটকা কীভাবে এসেছে জানি না। আমি খড়ির ব্যবসা করি।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক খন্দকার আব্দুল জলিল বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে। কিন্তু বাড়িটি থেকে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করেছি। সেগুলো অক্ষত আছে। সিলিন্ডার লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণ কিনা তা আমরাও তদন্ত করছি।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। পরিবারটি যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আর্থিক ক্ষতির দিকটা আমরা দেখার চেষ্টা করব।
শজিমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসীন আলী বলেন, আহত চার নারীর শরীর বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে বুশরা নামের এক কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শরাফত ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল থেকে বস্তাভর্তি পটকা উদ্ধার করা হয়েছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেএন/এমআর