বায়ার্ন মিউনিখ আর রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচকে বর্ণনা করা হয়েছিল দ্য ব্যাটেল অব রয়্যালস বা অভিজাতদের লড়াই হিসেবে। সত্যিকার অর্থেই সেমিফাইনালের প্রথম লেগ যে কতখানি অভিজাত ছিল, তা বোঝা গেল ৯০ মিনিট শেষে। বায়ার্নের ঘরের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় দুই দলই উপহার দিয়েছে ধ্রুপদী ফুটবল। ভাগ্যও বোধহয় কাউকে নিরাশ করতে চায়নি। হাইভোল্টেজ ম্যাচ শেষ হলো ২-২ গোলের ড্রয়ে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ কেন সবার চেয়ে সেরা তার নমুনা দেখা গেল প্রথমার্ধেই। শুরুর চল্লিশ সেকেন্ডেই এগিয়ে যেতে পারত বায়ার্ন মিউনিখ। হ্যারি কেইনের পা ঘুরে দারুণ বল পেয়েছিলেন লেরয় সানে। তবে দূরের পোস্টে শট নিতে গিয়েই ভুল করলেন। রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন করেছেন দারুণ এক সেইভ। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে বধের পর আজ আবারও রিয়ালের ত্রাতা তিনি।
শুরুর ২০ মিনিট এভাবেই ছিল খেলা। জামাল মুসিয়ালা একাধিকবার রিয়ালের বক্সে হানা দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্লো অ্যানচেলত্তির নিখাঁদ ইতালিয়ান ডিফেন্স স্বাগতিকদের হতাশ করেছে বারবার। হ্যারি কেইন নিজে বল পেয়েও জোরালো শট নিতে পারেননি। আর সানে বাজে টাচের খেসারত দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এত সুযোগের অপব্যবহারের শাস্তিই যেন রিয়াল দিয়েছে ২৩তম মিনিটে এসে।
টমাস টুখেল বরাবরই গ্রেগেনপ্রেসিং ঘরানার কোচ। বল দখলের লড়াইয়ে বায়ার্ন ডিফেন্ডার কিম মিন জায়ে অনেকটা ওপরে উঠে এসেছিলেন তখন। আরেক ডিফেন্ডার এরিক ডায়ার ব্যস্ত ছিলেন বেলিংহামকে মার্ক করতে। রিয়ালের জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুস যেন এটারই অপেক্ষা করছিলেন। ক্রুসের দুর্দান্ত এক ডিফেন্সচেরা পাস রিসিভ করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই ব্রাজিলিয়ান সহজেই বল জালে জড়ান (১-০)।
এটি ভিনিসিয়ুসের শেষ ১১ ম্যাচে ৮ম গোল। এই নিয়ে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে গোল করলেন ভিনি জুনিয়র। প্রথমার্ধে আর তেমন সুযোগ পায়নি কেউই। তবে দুদলই বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক পেয়েছিল। বল টার্গেটেই রাখা হয়নি কারোর।
দ্বিতীয়ার্ধেই সপ্তম মিনিটের মাথায় যেন প্রথমার্ধের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন লেরয় সানে। ডিবক্সের কাছাকাছি বল পেয়ে ফার্লান্দ মেন্ডিকে পাস কাটিয়ে কাছের পোস্টে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক শট। তার চকিত গতির সামনে রিয়ালের ডিফেন্স যেন অসহায়। বুলেটগতির সেই শট ঠেকাবার সামর্থ্যই ছিল না আন্দ্রে লুনিনের (১-১)।
ঘড়ির কাটায় ঠিক চার মিনিট পরেই লিড পায় বায়ার্ন। জামাল মুসিয়ালাকে বক্সে ফাউল করতে বাধ্য হয়েছিলেন ফেডে ভালভার্দে। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দেরি করেননি। স্পটকিকে গোল করেন হ্যারি কেইন (২-১)। রিয়ালের বিপক্ষে এটিই ছিল তার প্রথম গোল। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও এখন এই ইংলিশম্যান।
৬৫ মিনিটে ফের বাভারিয়ানদের এগিয়ে দিতে পারতেন হ্যারি কেন। তার দুর্বল শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে অল্পের জন্য রিয়ালের জালে যায়নি। কর্নার থেকে এরিক ডায়ারের দারুণ হেডও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। বিপরীতে রিয়াল যে সুযোগ পায়নি তা নয়, গোল করার সুযোগ ছিল ভিনিসিয়ুসের সামনেও। যদিও কিম মিন জায়ে এ দফায় নিজের কাজটা ঠিকভাবেই করেছিলেন।
৮১ মিনিটে আবারও বায়ার্নের বিপদ ডেকে আনেন কিম মিন জায়ে। ডিবক্সে রদ্রিগোকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেন রিয়ালকে এই ডিফেন্ডার। স্পটকিক থেকে গোল করতে সমস্যাই হয়নি ভিনিসিয়ুসের (২-২)। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনাকে আরেকবার স্তব্ধ করেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা।
ম্যাচের বাকি সময় দুই দলই খেলেছে কিছুটা রয়েসয়ে। যেন রোমাঞ্চের বাকি পর্বটা মাদ্রিদে দ্বিতীয় লেগের জন্য জমিয়ে রাখতে চেয়েছে হ্যারি কেইন-টনি ক্রুসরা।
জেএন/এমআর