গরিবর আবার কিয়ুর মে দিবস। আজিয়া কাজ ন গরলি খায়ুম কি? যে দিন্ন কাম ন গরি এদিন্না ন খায় শুয় থাকি।
বৈশাখের আকাশে গণগণে সূর্য। প্রখর উত্তাপে যেন জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে প্রকৃতি! কাঠফাটা রোদ্দুরে পুড়ছে ইদ্রিস মিয়ার শরীর, তপ্ত পথে দগ্ধ হচ্ছে পায়ের পাতা। ইদ্রিস মিয়া সকাল থেকে নন্দনকাননের একটি নির্মনাধীন ভবনের ইট ভাঙ্গার কাজ করে যাচ্ছেন।
বুধবার (১ মে) সকালে নগরের নন্দনকানেরর একটি নির্মনাধীন ভবনের ইট ভাঙ্গার কাজ করার সময় ঘামে ভেজা শরীরে চিকচিক করছিল লবণের সাদা দানা। মে দিবস আসে, মে দিবস যায়। অন্তঃত ৩০ বছর ধরে এই কাজ করা ইদ্রিস মিয়ার জীবনে কী দিনটির বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে?
কাজের ফুরসতে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ইদ্রিস মিয়ার। মে দিবস- কথাটা শুনে চোখ তুলে তাকায় ইদ্রিস, কিছুটা বিস্মিত, কিছুটা বিরক্ত। তিনি বলেন, গরিবর আবার মে দিবস, এটা কী ? কিয়ুর মে দিবস ? আরার আর মে দিবস কী? আমরা কাম গরি, ভাত খাই। পত্যদিন কম বেশি কাম গরন পড়ে, কিন্তু পেডত পত্যদিন ভাত না পরে। পুরাদিন কাম গরলি ৫০০ চেয়া, পুরা দিন কাম না গরলি ২০০-৩০০ টেয়া পাই। আর কাজ-কাম না থাকলে না খাইয়া শুয় থাকি।
ইদ্রিস মিয়ার মতো শ্রমজীবীদের জীবনে আসলেই কী মে দিবস প্রতিদিনের চেয়ে আলাদা বিশেষ কোনো দিন? দিনটিতে শ্রমিক সংগঠনগুলো মিছিল করে, লাল পতাকার শোভাযাত্রা হয়, গান-নাচ-আবৃত্তি হয়, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের জীবনে এসব আনুষ্ঠানিকতার কী কোনো প্রভাব আছে?
সেখানে ইট ভাঙ্গার কাজ করেছেন আসিয়া বেগম। ডিসি রোড থেকে প্রতিদিন এখানে আসে কাজ করতে। আসিয়াকে যখন মে দিবসের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, এই দিবস তাদের মতো দিনমজুরের জন্য না। বরং একদিন কাজ না করলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।
সকালে নন্দনকানন এলাকায় ফুটপাতের নালা নতুন করে মেরামত করেছেন আজাত আলী। কথা হয় তার সাথে। সেখানকার তিনি বলেন, মে দিবস কাজ না করলে কেউ কী টাকা দেবে? পেটে ভাত যাবে কীভাবে?
তিনি জানান, যে টাকা মুজুরি পাই তা দিয়ে সংসারের খরচ জোড়াতালি দিয়ে চলে। কষ্ট হয় তারপরেও কাজ করি। আর সরকারি ছুটি থাকায় পুরো দিন কাজের সুযোগ পেয়েছি। পরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তিনি বলেন, গরিব মানুষের আবার মে দিবস!
মহান মে দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত, কলকারখানা ছুটি। আর দিনমজুর নারী-পুরুষ নিম্ন আয়ের এ শ্রমিকরা প্রতি দিনের মতো মহান মে দিবসও শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়েছে উম্মুক্ত আকাশের নিচে। তাদের কেউ মে দিবস সম্পর্কে জানেন, আবার অনেকে কিছুই জানেন না।
তাদের দেখলে মনে পরে যায় কাজী নজরুল ইসলামের কুলি মজুর কবিতার সেই একটি লাইন দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল, এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে…………..
প্রত্যেক বছর মহান মে দিবস আসে যায়। গোটা বিশ্বের মতো জমকালো ও যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু যাদের জন্য এতো আয়োজন তাদের কী কিছু আসে যায়। অধিকার আদায়ে দিবসটি কী তাদের জন্য আজও কার্যকর তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।
জেএন/হিমেল/এমআর