নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছেলে সাবাব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট করায় এবার ইউপি সদস্যকে ‘ডিও লেটার’ বন্ধের ভয় দেখিয়েছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলি। এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
রোববার (৫ মে) বিকেলে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের স্থানীয় সাত্তার মাঝির বাড়িতে উঠান বৈঠকে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এ হুমকি দেন তিনি। কামরুন নাহার শিউলি সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরীর মা।
ভিডিওতে কামরুন নাহার শিউলিকে বলতে শোনা যায়, শুনেন, যে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেতারে (তাকে) জিজ্ঞেস করিয়েন, বোলে তুই আগে কি একরাম চৌধুরীর বাড়িত যাই চেহারা এমনের তুন (মাথা নিচু করে) ওপরে তুলতি না, বলতি ভাবি আঁরে বাঁচান, ভাবি আঁরে বাঁচান। অনগা (এখন) হেই মহিউদ্দিন চৌধুরী জোট বাইনছে। বান্দুক, আজ্জা জোট বান্দি যদি জনগণের উন্নয়ন কইত্তে পারো, করো। কাঁচা রাস্তা দি আঁড়ি আইছি। তোর ডিও লেটারে তো আর এ রাস্তার উন্নয়ন অইতো নয়। তুই কোদ্দুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, তুই শুধু সিলিপ (স্লিপ) এক্কান দিতা হাইরবা, আর জনগণের চাইল ৩০ কেজির তুন হোনরো (১৫) কেজি কাড়ি রাইকতা হাইরবা। এসব ষড়যন্ত্র পাকানোকারীদের আপনারা চিহ্নিত করে রাখেন।’
জানা যায়, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের দোয়াত কলম মার্কার ভোট করছেন। বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশেও উপস্থিত থাকছেন। এর আগে কামাল বাজারে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হুমকি দিতে শোনা যায় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকেও।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে। মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে এর আগেও এমপি সাহেব উন্নয়ন বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম চৌধুরীর পক্ষে ভোট করছি। তবে কখনো অন্যায়-অপরাধ করিনি। কারও কাছে মাথা নত করিনি। কারও কাছে মাথা নামিয়ে কথাও বলি না। মাফও চাই না। কিছু ব্যক্তি নির্বাচন এলে মাফ চাইবে, নির্বাচিত হলে নিজেকে খোদা মনে করবে! ঘৃণা করি মিথ্যাবাদী বেইমানদের, ওনার পাশে দাঁড়ানো যারা, তারা কী করে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন। চোর ডাকাত টাউট বাটপার পাশে নিয়ে ৮ নং মোহম্মদপুর জনগণকে বোকা বানানো যাবে না।
কামরুন নাহার শিউলি বলেন, আমার বক্তব্যকে কাটছাঁট করে টিকটক বানানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেও এমন করা হয়। আমরা এসব ভয় করি না। যারা ভোটকে ভয় পায় তারাই এসব ষড়যন্ত্র করে। আমি অনেক জায়গা ঘুরেছি। আমি জানি কীভাবে কাজ আনতে হয়। আমার স্বামী এমপি। তিনি ডিউ লেটার দেবেন।
এর আগে ছেলে সাবাব চৌধুরীকে ভোট না দিলে এলাকায় উন্নয়ন না করার হুমকি দেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, যে এলাকা থেকে ভোট কম দেবেন, সে এলাকায় কোনো উন্নয়নে হাত দেব না। সরাসরি কথা, গিভ অ্যান্ড টেক। আমাকে দেবেন, আমি আপনাদের দেব। আমারে এমপি বানাইছেন, আমি তো বলছি, পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছি। এখন আমার মনমতো উপজেলা চেয়ারম্যান যদি বানান, আমার মিডলম্যান, আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম।
প্রসঙ্গত, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী বুধবার (৮ মে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির একমাত্র ছেলে আতাহার ইশরাক ওরফে সাবাব চৌধুরী (আনারস)। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সভাপতি ও সূবর্ণচর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম চৌধুরী (দোয়াত কলম)।
জেএন/এমআর